যে যুক্তিতে ২ মন্ত্রীর আসনের সীমানা নিয়ে রিট খারিজ করলেন হাইকোর্ট
ভৌগলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যার বাস্তব বণ্টনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই পিরোজপুর-১ ও ২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের ৬(৩) ধারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করেই উক্ত আসন দুটি সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে। এতে আইনের কোন ব্যত্যয় হয়নি।
রোববার (৩ আগস্ট) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
রিটকারী পক্ষের যুক্তি ছিল জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের ৬(৩) ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক যে তালিকা ইসি প্রস্তুত করেছিল সেখানে প্রস্তাব ছিল। তবে প্রাথমিক নোটিশে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে যেসব প্রশাসনিক এলাকা নিয়ে তার উল্লেখ ছিল না। এতে উক্ত আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।
আরও পড়ুন : দুই মন্ত্রীর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বৈধ : হাইকোর্টের রায়
এ প্রসঙ্গে রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আইনের ৬(৩) ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক তালিকা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই তালিকা প্রস্তাব (পুনর্নির্ধারিত এলাকাসহ প্রস্তাব) সহ করতে হবে সেটা আইনের কোথাও নেই। এছাড়া প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের পর ৬(৪) ধারা অনুযায়ী মতামত ও আপত্তি নিয়ে শুনানির প্রাথমিক তালিকার প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার ক্ষমতা ইসির রয়েছে। সেই হিসাবে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি এ দুটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে। ফলে রিট আবেদনের রুলের উপর জারিকৃত দুটি রুল খারিজ করা হলো।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, পিরোজপুর-১ আসনের ভোটার সংখ্যা ৬ লাখের মতো। অপরদিকে পিরোজপুর-২ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখের কিছু বেশি। জনসংখ্যার বাস্তব বণ্টনের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই দুটি আসনের ক্ষেত্রে যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে তাতে ভোটারের ভারসাম্য প্রকৃতভাবে রক্ষা হয়েছে। এছাড়া সীমানা পুনর্নির্ধারণের ফলে প্রশাসনিক সুবিধাও হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান, অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন মিয়াজী।
আরও পড়ুন : কাঁদলেন প্রধান বিচারপতি, কাঁদলেন আত্মীয়-পরিজন
গত ৩০ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-১ ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী আসন পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
ওই দিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান,ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন মিয়াজী।
এর আগে পিরোজপুর-১ ও পিরোজপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন পিরোজপুরের কাউখালীর বাসিন্দা আবু সাঈদ মিয়া, ভান্ডারিয়া পৌরসভার বাসিন্দা মো. কায়কোবাদ,মো. আহসানুল কিবরিয়া, ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান, নেছারাবাদ উপজেলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শরীফ।
গত ৩ জুন প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পিরোজপুর-১ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে পিরোজপুর-২ আসনে থাকা ইন্দুরকানি উপজেলা। আর পিরোজপুর-১ আসন থেকে কেটে নেছারাবাদ উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে পিরোজপুর-২ আসনের সঙ্গে। ফলে এখন পিরোজপুর-১ আসনের সীমানায় থাকছে পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলা।
অন্যদিকে পিরোজপুর-২ আসনে থাকছে কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা। ইন্দুরকানি উপজেলা বাদ দিয়ে এখানে নেছারাবাদকে যুক্ত করায় নাখোশ এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য হলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম।
এমএইচডি/এসকেডি