আদালতে তর্কে জড়ালেন দুদক আইনজীবী ও ব্যারিস্টার সুমন
খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানের প্রতিবেদন দাখিল না করাকে কেন্দ্র করে আদালতে তর্কে জড়িয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বুধবার (২৩ আগস্ট) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আদালত বার বার আদেশ দেওয়ার পরও দুদক আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করছে না। দুদক এক ধরনের মোকারি করছে। এসময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, প্রতিবেদন প্রস্তুত আছে। এখন কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আমরা যেনতেন প্রতিবেদন জমা দিতে পারি না। বিচার বিশ্লেষণ শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এজন্য সময়ের প্রয়োজন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, একই কথা আদালতে বার বার বলছেন। হাইকোর্টের আদেশের চেয়ে কি দুদক কমিশনারদের বৈঠক বড় হয়ে গেল? দুদকের সদিচ্ছা থাকলে প্রতিবেদন দাখিলে এত সময় নেওয়ার কথা না। দুদক আদালতের আদেশ মানছে না। এ কারণে দুদকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হওয়া উচিত।
পরে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষ শান্ত হন। একই সঙ্গে আদালত খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান প্রতিবেদন আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে দুদকের আদালত অবমাননা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
গত ২০ জুলাই জানানো হয়, খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) গঠিত অনুসন্ধান টিম। অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুদক কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে। যা এখন পর্যালোচনাধীন। কমিশন অনুমোদন দিলেই এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হবে।
অনুসন্ধান কমিটির টিম লিডার ও দুদকের উপ-পরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাত স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন(দুদক)।
গত ১৬ জানুয়ারি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত মূল নথি ও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এফিডেভিট করে এক সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। সালাম মুর্শেদীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাজউকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন মাসুদ।
গত ১২ ডিসেম্বর খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত নথি ও প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন দুদককে দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ১৩ নভেম্বর সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সম্পর্কিত কাগজপত্র হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। সেদিন সালাম মুর্শেদীর পক্ষে কাগজপত্র দাখিল করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
গত ১ নভেম্বর সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ সম্পত্তি সম্পর্কিত সব কাগজপত্র ১০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) রাজউক, গণপূর্ত বিভাগ ও সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেন আদালত।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
তারও আগে সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে রিট করা হয়। রোববার (৬ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট দায়ের করেন। রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
এমএইচডি/এমএ