এমপি পাপুলসহ ৪ জনের ৬১৭ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
অর্থ ও মানব পাচারের দায়ে কুয়েতের কারাগারে বন্দী লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামসহ চার জনের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও ৯২টি তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এদিন দুদকের পক্ষ থেকে তাদের এসকল ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন।
এর আগে, গত ১১ নভেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন পাপুলসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম।
দুদকের মামলায় ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের মধ্যে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের ১৪৮টি, স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামর ৩৪৫টি, মেয়ে ওয়াফা ইসলামের ৭৬টি ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের ৪৮টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ও প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন প্রধানের পাঁচটি হিসাবের মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত লন্ডারিং হয় ১৪৮ কোটি টাকা। অথচ মাত্র বয়স ২৩ বছর বয়সী জেসমিনের নিজের কোনো আয়ের উৎস নেই।
এছাড়াও এফডিআর হিসাবের ২ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার কোনো উৎস শ্যালিকা জেসমিন দাখিল করতে পারেননি। যে কারণে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
সিআইডির মামলায় আরো ৫৩ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
পল্টন থানায় সিআইডির দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলায় পাপুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে ৫৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা ম্যাট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে মামলার এজাহার পৌঁছালে বিচারক তা গ্রহণ করে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আগামী ৩১ জানুয়ারি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম, ভাই কাজী বদরুল আলম লিটন, পাপুলের ব্যক্তিগত কর্মচারী মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান মনির, জব ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা, জেসমিন প্রধানের মালিকানাধীন কম্পানি জেডাব্লিউ লীলাবালী ও কাজী বদরুল আলম লিটন। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরো পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার (অর্গানাইজ ক্রাইম) আলামিন বাদী হয়ে কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুল, তার শ্যালিকা ও মেয়েসহ আটজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসামিরা মানবপাচারকারী চক্র। তারা বিভিন্ন সময় ৩৮ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৭ টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন। যার সঙ্গে পাপুল ও তার মেয়ের প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
বিচার চলছে কুয়েতেও
সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল রাজনীতিতে চমক দেখিয়েছেন বেশ কয়েকবার। তবে সর্বশেষ তিনি যে চমক দেখিয়েনে তা হলো কুয়েতে গ্রেফতার হয়ে। সেপ্টেম্বরে কুয়েতের আদালতে তার বিচারও শুরু হয়েছে। পুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো বর্তমান সংসদ সদস্যকে এর আগে বিদেশের মাটিতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
পাপুলের এমপি পদের ভবিষ্যৎ কী
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে পাপুল অনেককে অবাক করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থন আদায় করে। সহিদ ইসলাম পাপুলকে কেন্দ্রীয়ভাবে তার জোট সমর্থন দেয়ায় মহাজোটের প্রার্থীই সরে দাঁড়িয়েছিলেন নির্বাচন থেকে। চমকের এখানেই শেষ হয়নি। নির্বাচনের পর দেখা গেল পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন।
কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার এই পাপুলের এমপি পদের ভবিষ্যদ কী তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে অনেকের মনে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
সে হিসেবে কুয়েতে মানবপাচারের মামলায় দুই বছর জেল হলেই কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে সংসদ সদস্য পদ হারাতে হতে পারে।
টিএইচ/ওএফ/এনএফ