নতুন করে প্রতারণা করলে ইভ্যালির রাসেলের জামিন বাতিল : হাইকোর্ট
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলের জামিনের রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। নতুন করে আর কোনও প্রতারণামূলক অপরাধে জড়ালে রাসেলের জামিন বাতিল করা হবে।
রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, মিডিয়ার কারণে ইভ্যালি ও ইভ্যালির মামলার বিষয়টি বহুল আলোচিত হয়েছে। প্রশাসনিক আইনের দৃষ্টিতে তিন ধরনের পক্ষপাত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মিডিয়া পক্ষপাত, যা প্রকাশিত পক্ষপাত। মিডিয়া পক্ষপাত কনফারমেশন পক্ষপাতে পরিণত হয়েছে। মিডিয়া পক্ষপাতটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে। এখানে বিচারের ক্ষেত্রে পক্ষপাতের কোনও সুযোগ নেই।
আদালত আরও বলেন, পক্ষপাত ন্যায় বিচারের পরিপন্থি। মিডিয়ার কারণে জনমনে আগে থেকে ধারণা সৃষ্টি হয়। সেই ধারণার ভিত্তিতে আদালত বিচার করতে পারেন না। আদালত তা গ্রহণ করতে পারেন না। আদালত বিচার করেন মামলার নথি দেখে, আইন দেখে ও ন্যাচারাল জাস্টিস অনুসরণ করে। মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়। এই মামলায় বাদীর দাবি করা টাকার বিপরীতে আসামি চেক ফেরত দিয়েছেন। তার পাওনা মিটিয়ে দিয়েছেন।
ইভ্যালির রাসেলের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে চারটি শর্ত দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিকে পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না। ১০০ টাকার পণ্য ৫০ টাকায় বিক্রির জন্য কোনও ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। আসামি প্রতি মাসে একবার করে নিম্ন আদালতে হাজির হবেন এবং আদালতে লিখিতভাবে জানাবেন তিনি নতুন করে আর কোনও প্রতারণামূলক অপরাধে জড়াননি। নিম্ন আদালত সেই বিবেচনায় আসামির হাজিরার তারিখ নির্ধারণ করবেন। নির্ধারিত তারিখে হাজির হতে ব্যর্থ হলে আসামির জামিন বাতিল করা হবে।
প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জামিনের রায়ে এসব শর্তের কথা বলেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাসেলের জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রাসেলকে জামিন দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম বলেন, রাসেলের বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় তিনি এখনই কারামুক্তি পাচ্ছেন না।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, রাসেলের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।
প্রতারণার দায়ে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার হন মো. রাসেল। সেদিন বিকেল পাঁচটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান তার স্ত্রী।
২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাসেল দম্পতিসহ অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে বাড্ডা থানায় মামলাটি দায়ের করেন ইভ্যালির গ্রাহক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন।
মামলায় বলা হয়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইভ্যালি থেকে ইলেকট্রনিকস পণ্য কেনার জন্য বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ২৮ লাখ টাকা পাঠান বাদী। অর্ডার দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও সাতমাস পরও তিনি তা বুঝে পাননি।
পরে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ কুমার দাস।
চলতি বছরের ২ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত।
এমএইচডি/কেএ