বিআইএফসির অবসায়নের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ
পিকে হালদার কাণ্ডে আলোচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) লিমিটেড অবসায়নের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৩ এপ্রিল) বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি একটি লিজিং কোম্পানি। ২০১৫ সালে পিপলস লিজিংয়ের পিকে হালদার ৫ শতাংশ শেয়ার কিনে এটা নিয়ে নিয়েছে। এটার প্রাক্তন মালিক ছিল মেজর মান্নানসহ বিদেশি ৫টি কোম্পানি। এই কোম্পানিতে আর্থিক সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির বিদেশি বিনিয়োগকারী রকিউত উল্লাহ। এই কোম্পানিতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছিলেন। তিনি বিনিয়োগের টাকা না পেয়ে আদালতে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে আবেদন করেন। ২০২১ সালে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে তিনি এ আবেদন করেন। আদালত এর আগে কয়েকবার আবেদনকারীর টাকা ফেরত দিতে কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা আদালতের আদেশ পালন করেননি। আজকে এ কারণে আদালত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির অবসায়নের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। পরে শুনানি শেষে আদালত অবসায়নের বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে আশা করছি।
এদিকে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) থেকে বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান একাই ৫১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নামে-বেনামে ঋণের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন। বর্তমানে মোট সম্পদের চেয়ে দায় বেশি হওয়ায় বিআইএফসির পাওনাদার/আমানতকারীদের পাওনা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
প্রতিবেদনে বিআইএফসির মতো অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটপাট বন্ধ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
বিআইএফসিতে সৃষ্ট অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ৫০ হাজার সাধারণ শেয়ারে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করে বিআইএফসি গঠন করা হয়। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে (অনুচ্ছেদ-৪.২.১)। বর্তমান বিআইএফসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদ ৮২৭.২৯ কোটি টাকার বিপরীতে মোট দায় ১৮৩৫.৯৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের চেয়ে দায়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
বিআইএফসির মোট ১৮৩৫.৯৬ কোটি টাকা দায় সৃষ্টি হয়েছে। মোট সম্পদের চেয়ে দায় বেশি সৃষ্টি হওয়ায় বিআইএফসির এসব পাওনাদার/আমানতকারীদের পাওনা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেজর (অব.) মান্নান এককভাবে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬৭টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৫১৭ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা নিয়েছেন। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যে এসব টাকার দায় স্বীকার করেছেন।
সৃষ্ট অবস্থার জন্য বিআইএফসির পরিচালক পরিষদ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের দায় সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর (অব.) মান্নানের একক উদ্যোগেই বিআইএফসি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে মেজর মান্নানের একক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে আসছিল। শ্যান জিং হুং কন্টিনেন্ট ক্রেডিট লি. হংকংয়ের মনোনীত পরিচালক হিসেবে থাকলেও ১৯৯৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কোনো সভায় অংশগ্রহণ করেননি। মেরিল অ্যান্ড ফোর্বস নামে বিআইএফসির আরও একটি বিদেশি বড় অংকের শেয়ারের মালিক হলেও তাদের পক্ষে কেউ পর্ষদে ছিলেন না। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প পরিচালক হিসেবে মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এবং তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান ছিলেন। অন্যান্য পরিচালকদের মধ্যে তানজিলা মান্নান, তাজরিনা মান্নান দুজনই মেজর মান্নানের মেয়ে। অর্থাৎ, বিআইএফসি গঠনের পর থেকে পরিচালনা পর্ষদে যারা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা সবাই মেজর মান্নানের আত্মীয় এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। অনেক পরিচালকের মনোনয়নের ক্ষেত্রে পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত ছিল না। এছাড়াও নানা অনিয়ম করে পরিচালক পর্ষদ মেজর (অব.) মান্নানের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
এমএইচডি/জেডএস