নাইট ক্লাবে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান শাকিব, রহমতকে দিয়েছেন ৪০ লাখ
চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে রহমত উল্লাহ নামে এক প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। মামলার অভিযোগে শাকিব উল্লেখ করেন, তিনি নাইট ক্লাবে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এছাড়া আসামি রহমত উল্লাহ তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে শাকিব খান চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে মামলা করেন। এসময় আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে রহমত উল্লাহকে আগামী ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেছেন আদালত।
মামলার অভিযোগে শাকিব খান উল্লেখ করেছেন, ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক ছবিতে অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব। চুক্তি অনুযায়ী, ছবির নায়িকা হিসেবে শাকিব খানের বিপরীতে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়।
আরও পড়ুন : প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে শাকিবের মামলা
শুটিং করতে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় যান শাকিব। এরপর তিনি জানতে পারেন ছবিতে আগে থেকে মনোনীত নায়িকা শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এর শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া আসতে পারেননি। তার জায়গায় অ্যানি রেনেসা সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীকে নায়িকা হিসেবে তার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ শাকিবকে অনুরোধ করলে তিনি তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে প্রস্তাব নাকচ করেন।
আসামি রহমত শাকিবকে ফাঁদে ফেলার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি বাদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বাদীকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য একটি নামিদামি ক্লাবে নেওয়ার প্রস্তাব করলে শাকিব রাজি হয়ে একদিন শুটিং শেষে আসামির সঙ্গে ক্লাবে যান। ক্লাবে গিয়ে বাদী অ্যানি রেনেসা সাবরিনসহ আরও দুই/তিন জন অপরিচিত লোকজনকে দেখতে পান। ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন শাকিব খান। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থবোধ করলে হোটেলে ফেরত আসার সময় আসামি এবং অন্য দুই/তিন জন লোককে খুঁজে না পেয়ে অ্যানি রেনেসা সাবরিন থেকে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফেরত আসতে গেলে অ্যানি শাকিবকে জানান, আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন তাহলে চলেন আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি। শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়ে ওই ভদ্র মহিলার প্রস্তাবে রাজি হয়ে হোটেল রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে শাকিব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান।
ঘটনার পরদিন সকালে মামলার আসামি রহমত শাকিবকে ফোনে জানান, তুমি রাতে ওই মহিলার সঙ্গে কী করেছ সব কিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দাও তাহলে আমি সব ভিডিও ক্লিপ ও অ্যানি রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে কমপ্লেইন করব এবং তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।
এরকম বিভিন্ন ভয়ভীতির একপর্যায়ে শাকিব ভয় পেয়ে যায়। বাদী তখন ভাবে, যেহেতু তিনি অজ্ঞান ছিলেন সেহেতু তারা তার সঙ্গে এমন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাদী ভয়ে তখন আসামিকে বলেন যে, আমার কাছে তো এত ডলার নেই। আমি তোমাকে এত টাকা দেব কীভাবে? আসামি তখন প্রতি উত্তরে জানায়, তুমি অনেক বড় লোক, তোমার অনেক টাকা আছে, টাকা না থাকলে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনাও, যদি আমার দাবি করা ডলার পরিশোধ না করো তাহলে সব ভিডিও ক্লিপ আমি মিডিয়াতে দিয়ে দেব এবং ভিডিও ক্লিপসহ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে অভিযোগ করব। তাতে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে হয়ে যাবে। তখন শাকিব ভয়ে এবং তার ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্লাহকে তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করেন।
আরও পড়ুন : এবার সাইবার ট্রাইব্যুনালে চিত্রনায়ক শাকিব খান
তারপরও আসামি তাকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখালে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় শাকিব তাকে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে প্রদান করেন।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি চাঁদা চাওয়া অব্যাহত রাখলে বাদীর কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় পরবর্তীতে চাঁদা দিতে না পারায় বাদীকে জানানো হয়, তার নামে অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
পরে বাদী পুনরায় ২০১৮ সালে ওই ছবির শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া গেলে আনুমানিক ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই অভিযোগের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ কর্মকর্তা বাদীকে জানান, ‘মিস্টার খান ইট ইজ এ হানি ট্রেপ, সো বি অ্যাওয়ার ইয়োর সেলফ ফ্রম দ্যাম’। শাকিব বুঝতে পারেন আসামি মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাদীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তারপর থেকে বাদী আসামিকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে আসামি মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বিভিন্ন জায়গায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাছে বাদীর নামে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন।
সবশেষ ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ আনুমানিক রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ওই ঘটনা মীমাংসার কথা বলে স্প্যারো নামক একটি রেস্টুরেন্টে ওই আসামি বদির কাছে ১ লাখ ডলার পুনরায় দাবি করে। আসামি জানায় যে, যদি ১ লাখ ডলার না দিস তাহলে তোর মাথা আর ঘাড়ে থাকবে না। তোর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেব বলে হুমকি প্রদান করেন। ফলে বাদী এখন এক প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এনআর/এসএসএইচ/