তারেকের এপিএসের পক্ষে আদালতে লড়ছেন আ.লীগের কামরুল
অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আপিল বিভাগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) আসামি নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর জামিনের পক্ষে শুনানি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
সাবেক খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আইন প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় সবসময় সোচ্চার।
তবে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের দাবি, আসামি নুরউদ্দিন আহমেদ অপু যে তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন, তা তিনি জানতেন না। বিএনপি থেকে জাতীয় নির্বাচন করার কথা উল্লেখ থাকলেও মক্কেল অপু যে তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন, তা মামলার কোথাও উল্লেখ নেই।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে র্যাব। মামলায় ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) এবং ২০১৩ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৭ ও ৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে মতিঝিল সিটি সেন্টারে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এবং ইউনাইটেড করপোরেশনের অফিসে বিপুল পরিমাণ অর্থ মজুদের অভিযোগ পায় র্যাব-৩। সংবাদ পেয়ে ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে এ এম হায়দার আলীকে আটক করে র্যাব।
এসময় তার কাছ থেকে তিন কোটি ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। একই কাজে ব্যবহারের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা মানিটারি এক্সপ্রেস অফিসে রেখে আসার কথা স্বীকার করেন হায়দার আলী।
ওই ঘটনায় ছয়জনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। এ মামলার আসামি নুরউদ্দিন আহমেদ অপু তারেক রহমানের এপিএস ও শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন।
২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তারের পর থেকে অপু কারাগারে আছেন। এ দুই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টে এসে জামিন চান অপু। পরে গত বছর ২ ডিসেম্বর সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় অপুকে জামিন দেন হাইকোর্ট। আর অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের মামলায় জামিন হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত বছর ৫ ডিসেম্বর ও গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তার জামিন স্থগিত করে চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ অপুর জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। আবেদন দুটি সোমবার (১৩ মার্চ) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী। নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এসময় দুদকের আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন। শুনানির পর মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।
শুনানির পর আদালত থেকে বেরিয়েই কামরুল ইসলামকে ঘিরে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবী। আসামির অপরাধের গুরুত্ব কথা তুলে ধরে কামরুল ইসলামকে বলতে থাকেন, আপনি এ আসামির পক্ষে দাঁড়াতে পারেন না। আপনার আদর্শের সঙ্গে যায় না। তখন কিছু একটা বলতে গিয়েও না বলে সেখান থেকে চলে আসেন আইনজীবী কামরুল।
পরে আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইনজীবী হিসেবে কামরুল ইসলামের আলাদা একটা পরিচিতি আছে। তিনি যেকোনো মামলা লড়তে পারেন। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। তবে আদর্শ বলে একটা ব্যাপার থাকে, দৃষ্টিভঙ্গিগত একটা ব্যাপার থাকে। দৃষ্টিভঙ্গিগত ব্যাপারটা সবসময় পেশাগত নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না, বা পড়লেও অনেকে অনেকভাবে মানিয়ে নেন। কিন্তু আদর্শগত ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের আদর্শগত বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত। যদিও পেশা হিসেবে আইনজীবীদের নির্দিষ্ট সীমানা নাই। কিন্তু যারা সংসদ সদস্য, নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেছেন বা করছেন, তারা তো দেশ জাতির অহংকার। তাদের কাছে দেশ জাতির অনেক প্রত্যাশা থাকে। কাজেই যারা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, তারা যদি আদর্শগত দিকটা বজায় রাখেন তাহলে আমাদের নীতি-নৈতিকতার মানটা আরও বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, নুরউদ্দিন আহম্মেদ অপু নামের এক বিএনপি নেতার একটি মামলা লড়ছি। সে আমাদের কনিষ্ঠ এক আইনজীবী সহোদর। এই মামলা প্রয়াত আব্দুল মতিন খসরু লড়তেন। এই মামলার কোথাও লেখা নেই তিনি তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন বা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। মামলার কোনো জায়গায় এ বিষয়ে একটি শব্দও নেই। রাষ্ট্রপক্ষের সাবমিশনেও (যুক্তিতর্কে) এমনটা বলেনি। ফলে এ বিষয়টি আমার জানার কথা না।
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে যখন জামিনের বিরোধীতা করে অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল আপত্তি জানিয়েছেন, তখনও তিনি কিন্তু আদালতে বলেননি এই ব্যক্তি তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন। আদেশের পর আদালতের বাইরে এসে আমাকে বলেছেন, আসামি তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন। তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন জানলে নীতিগতভাবে এই তিনি মামলা লড়তেন না বলে জানান।
এমএইচডি/কেএ