আপন জুয়েলার্সের মালিকের মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত
মানি লন্ডারিং আইনে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধে রমনা থানায় করা মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রোববার (৭ মার্চ) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুবকর সিদ্দিক মামলার ‘অভিযোগপত্রটি দেখিলাম’ মর্মে স্বাক্ষর করেন। বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মামলাটি বদলির আদেশ দিয়েছেন তিনি। এ মামলার পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রম মহানগর দায়রা জজ আদালতে চলবে।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, আপন জুয়েলার্স বিভিন্ন সময় সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও পৌনে ৮ হাজার পিস ডায়মন্ড কিনতে গিয়ে ১৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাচার করেছে। এতে কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব অর্থপাচার করা হয়।
২০১৭ সালে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় একযোগে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। অভিযানে আপন জুয়েলার্সের ৫টি শাখা থেকে জব্দ করা হয় ৫৩৭ কেজি ৫০০ গ্রাম সোনা ও ৭ হাজার ৭৪৩ পিস ডায়মন্ড অলংকার। ওই বছরের ১২ আগস্ট আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ২টি, ধানমন্ডি থানায় একটি, রমনা থানায় ১টি ও উত্তরা পূর্ব থানায় ১টি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
আপন জুয়েলার্স অলংকার আমদানির বিপরীতে বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ শুল্ক গোয়েন্দা বলছে, অর্থপাচার করে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অলংকার দেশে আনা হয়েছে। আর এনবিআরে দেওয়া আয়কর নথিতে তথ্য গোপন করে দেওয়া হয়েছে কর ফাঁকি। শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই আজাদ আহমেদ, গুলজার আহমেদ ও দিলদার আহমেদকে দায়ী করা হয়েছে।
আপন জুয়েলার্সের গুলশানে সুবাস্তু স্কয়ার শোরুমের মামলায় আসামি করা হয় গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে। সেখান থেকে জব্দ করা হয় ২০৩ কেজি সোনা ও ২৮৫৯ পিছ ডায়মন্ডের অলংকার। জব্দ করা অলংকারের বিপরীতে পাচার হয়েছে ৭৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
মৌচাক মার্কেট শো-রুমের রমনা মডেল থানার মামলায় আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৫৪ কেজি ২শ গ্রাম সোনা ও ১৫৮০ পিছ ডায়মন্ড অলংকার। এর বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি টাকা।
এনআর কমপ্লেক্স শো-রুমের উত্তরা পূর্ব থানার মামলায়ও আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৮৯ কেজি সোনা ও ১৪১০ পিস ডায়মন্ডের অলংকার। যার বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ৩০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা।
ডিএনসিসি মার্কেট শো-রুমের গুলশান থানার মামলায় আসামি করা হয় আজাদ আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৯০ কেজি ৩শ গ্রাম সোনা ও ৩৩৮ পিস ডায়মন্ডের অলংকার। এর বিপরীতে বিদেশে পাচার করা হয়েছে ৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা।
এছাড়া সীমান্ত স্কয়ার শো-রুমের ধানমন্ডি থানার মামলায় আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ১০১ কেজি সোনা ও ১৫৫৭ পিস ডায়মন্ডের অলংকার। এর বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মোট ১৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাচার করা হয়েছে আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। ৬ মে রাতে ভুক্তভোগীদের একজন বনানী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরপরই শুল্ক গোয়েন্দা আপন জুয়েলার্সে অবৈধ অলঙ্কার জব্দ করতে অভিযানে নামে।
টিএইচ/আরএইচ