বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ
ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীনের ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে ই-অরেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফের তা দাখিল করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম, বিএফআইইউর পক্ষে ছিলেন শামীম খালেদ আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদালত বিএফআইইউর আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের প্রতিবেদনে দেখালেন, তারা অনেক টাকা উত্তোলন করেছেন, তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল, তার প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা। ওই টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। আপনাদের এই প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এই প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। এটা খাপ ছাড়া। আর পুলিশের রিপোর্টের বিষয়ে আদালত বলেন, তাদের রিপোর্ট পরিষ্কার করে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। দুদকের রিপোর্টে তারা পাশ কাটিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন আদালত।
এ সময় রিটকারীদের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম আদালতকে বলেন, রিপোর্টে সব তথ্য সঠিকভাবে আসেনি, এজন্য পূর্ণাঙ্গ করে একটি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চাইছি। একটা ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে এত টাকা লেনদেন হচ্ছে, এই টাকা কোথায় যাচ্ছে, কি কাজে ব্যবহার হচ্ছে, এর ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে কি না সেটা তো এনবিআরের দেখা উচিত। আর বিএফআইইউর কাজটা কি?
এ সময় আদালত বলেন, এসব লোকের কারণেই ঝামেলা হচ্ছে। দেশে কত উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাস্তাঘাটের কি উন্নয়ন হয়েছে। দেখলে মনে হবে না দেশের মধ্যে আছি। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের কারণে এখন সংকট তৈরি হচ্ছে।
আদালত বলেন, আমরা কাজ করছি, জনগণের জন্য। দেশ সোনার বাংলা হোক সেটা আমরা চাই।
পরে আদালত আদেশের বিষয়ে আগামী ৪ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
আদেশের বিষয়ে আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বিএফআইইউর প্রতিবেদনে সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজসহ আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, তাদের লেনদেন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য, এছাড়া আরও যাদের নাম এসেছে তাদের সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট বর্ণনাসহ সব কিছু পরিষ্কার করে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন করে বিএফআইইউ, দুদক, পুলিশ প্রধানকে রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শত শত কোটি টাকার যে লেনদেন হয়েছে, তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে কি না তা জানাতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে বুধবার (২ নভেম্বর) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান ও ভাই শেখ সোহেল রানার অস্বাভাবিক লেনদেন ও অর্থ লোপাট নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ই-অরেঞ্জ থেকে প্রতারণার শিকার দাবি করে ৫৪৭ গ্রাহকের পক্ষে করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)এর কাছে প্রতিবেদন চান আদালত। হাইকোর্টের সেই আদেশ প্রতিপালন করে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এমএইচডি/জেডএস