প্রদীপ দম্পতির বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ এবং তার স্ত্রী চুমকি কারনের বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এদিন মামলার রায়ে আদালত প্রদীপ কুমারকে ২০ বছর ও তার স্ত্রীকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বুধবার (২৭ জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালতে প্রদীপ কুমার দাশ ও চুমকি করন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মূসা জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ১৮ঙ(৯) এবং দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের (The Code of Criminal procedure) ধারা ৫১৭/৫২০ সহ প্রযোজ্য অন্যান্য বিধানাবলীর আলোকে তাদের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন>> স্ত্রীকে ব্যবসায়ী দেখিয়েও সম্পদ রক্ষা করতে পারেননি প্রদীপ
আদালত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটার ‘লক্ষিকুঞ্জ’ ভবনের ৬ষ্ঠ তলার উপরের ২টি কক্ষ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোল শহর মৌজায় অবস্থিত ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকার জমি ও সেমিপাকা ঘর, কক্সবাজারের ঝিলংজা ভবনের ১১ তলায় অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট, ২২ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যমানের দুটি মাইক্রোবাস রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন।
দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
এরপর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ দুর্নীতি মামলার চার্জ গঠনের মাধ্যমে প্রদীপ এবং তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।
এর আগে গত বছরের ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও চলতি বছরের ২৩ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। পরে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠান।
জানা গেছে, চুমকির ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। বাকি সম্পদ অর্থাৎ ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। এছাড়া চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মেরিনড্রাইভ চেক পোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় একই বছরের ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন ওসি প্রদীপ। সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
কেএম/জেডএস