১৭ মহিষের মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে জামাই-শ্বশুর
১৭টি মহিষের মালিকানা নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আবদুল অদুদ খান ও তার শ্বশুর নূর মোহাম্মদের মামলা হাইকোর্টের নির্দেশে সমাধান করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে দীর্ঘ চার ঘণ্টা সালিশ বৈঠক শেষে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৭টি মহিষের মধ্যে ৫টি বড় ও ৪টি ছোট মহিষ পাবেন অদুদ। আর ৬টি বড় ও ২টি ছোট মহিষ নেবেন শ্বশুর।
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড জানায়, এক দশক আগে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আবদুল অদুদ বিদেশ যান। সেখানে যাওয়ার আগে তার কেনা মহিষ ও গরু লালন-পালনের জন্য দিয়েছিলেন শ্বশুরকে। লালন-পালনের পর গবাদি পশুগুলো সংখ্যায় বেড়েছে। এক দশক পর বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন অদুদ। ফেরত চান তার গবাদি পশুগুলো। কিন্তু সেগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানান শ্বশুর নূর মোহাম্মদ। তদন্তের পর দায়রা আদালতের সিদ্ধান্ত যায় জামাই অদুদের পক্ষে। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন শ্বশুর।
মামলার বিষয়বস্তু শোনার পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ সালিশের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসকে।
বৃহস্পতিবার দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে চলা সালিশ বৈঠকের পরই বিরোধ নিষ্পত্তি হয় জামাই-শ্বশুরের। সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৭টি মহিষের মধ্যে ৫টি বড় ও ৪টি ছোট মহিষ পাবেন অদুদ। আর ৬টি বড় ও ২টি ছোট মহিষ নেবেন শ্বশুর। বিরোধ নিষ্পত্তির এ সিদ্ধান্ত এখন অবহিত করা হবে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, চাকরির জন্যে সৌদি আরবে যান অদুদ। তার স্ত্রী ও চার সন্তান রয়েছে। বিদেশ যাওয়ার আগে স্বামীর কেনা ৮টি মহিষ ও ৫টি গরু লালন-পালনের জন্য কহিনুর বেগম তার বাবা নূর মোহাম্মদকে দেন। ৫টি গরু ও ৮টি মহিষ বাছুরসহ ৭টি গরু ও ২০টি মহিষে পরিণত হয়। ১১ বছর চাকরির পর ২০১৯ সালে দেশে ফেরেন অদুদ। দেশে আসার পর গবাদিপশুগুলো ফেরত চাইলে নূর মোহাম্মদ ফেরত না দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর সেগুলো উদ্ধারের জন্য লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা করেন তিনি।
মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দেয় রামগতি থানা পুলিশ। একইসঙ্গে গবাদিপশুগুলোও উদ্ধার করে জিম্মায় নেয় পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গরু ও মহিষ নিজের দাবি করে আদালতে আবেদন করেন নূর মোহাম্মদ। এরপর প্রকৃত মালিকানা যাচাইয়ের জন্য আদালতের আদেশে চরকলাকোপা কারামতিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১ ডিসেম্বর গবাদিপশুগুলো জামাই অদুদের জিম্মায় দিতে আদেশ দেয় আদালত। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আবেদন করেন শ্বশুর। লক্ষ্মীপুরের দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল রাখেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন শ্বশুর। এরপরই হাইকোর্ট বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে বিবাদমান দুই পক্ষ ও তাদের আইনজীবীদের নিয়ে সালিশে বসে লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন ও সমন্বয়কারী রিপন পৌল স্কু। বৈঠকে দুই পক্ষই তাদের মতামত তুলে ধরেন।
অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন বলেন, পরিবারের মধ্যে এর চেয়েও জটিল বিষয় নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়। কিন্তু এসব কারোর জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনে না। শুধুই বিরোধই জিইয়ে রাখে না অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা চাই আপনারা মামলা মোকদ্দমা থেকে বেরিয়ে এসে বিরোধ মীমাংসা করে ফেলুন। এরপরই উভয় পক্ষ থেকে দেওয়া নানা প্রস্তাব যোজন-বিয়োজনের পর মীমাংসায় উপনীত হয় দুই পক্ষ। হাসি মুখে জামাই-শ্বশুর বিদায় নেন সুপ্রিম কোর্ট থেকে।
এমএইচডি/ওএফ