উদ্যোক্তারা এগিয়ে গেলেই, এগিয়ে যাবে দেশ
প্রথমবারের মতো দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্প্রতি ৬৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে শপআপ। উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় শপআপের কোফাউন্ডার ও চীফ প্রোডাক্ট অফিসার আতাউর রহিম চৌধুরীর।
ঢাকা পোস্ট : দেশীয় স্টার্টআপ হিসেবে ৬৪০ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ায় আপনাদের অভিনন্দন। শুরুতে জানতে চাই, এই বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে? আপনাদের অনুভূতিও জানতে চাই-
আতাউর রহিম চৌধুরী : অনেক ধন্যবাদ, ঢাকা পোস্টকে। আসলে এই বিনিয়োগের পেছনে শপআপের সব কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। এই মহামারি এবং বিভিন্ন সময়ের লকডাউনেও আমাদের সম্মুখসারির কর্মীদের হার না মানা পরিশ্রমের ফসল এই বিনিয়োগ। অবশ্যই আমি এবং শপআপের সব কর্মী এই বিনিয়োগে যেমন খুশি তেমনই আমরা দায়িত্ববোধও অনুভব করছি। আমরা সকলের দোয়া প্রার্থী।
ঢাকা পোস্ট : দেশীয় স্টার্টআপ হিসেবে ৬৪০ কোটি টাকা আপনারাই প্রথম পেয়েছেন?
আতাউর রহিম চৌধুরী : শপআপ সম্প্রতি ৬৪০ কোটি টাকার যে বিনিয়োগ পেয়েছে তা বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে আমাদের ব্যবসা খাতে সবচেয়ে বড় সিরিজ বা বিনিয়োগ।
ঢাকা পোস্ট : শপআপের শুরুর গল্পটা শুনতে চাই-
আতাউর রহিম চৌধুরী : আফিফ জুবায়ের ও সিফাত সারওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু ছিলেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে বিবিএ করেন। এরপর সিফাত সারওয়ার যোগ দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে আর আফিফ জুবায়ের খোলেন নিজের একটি ব্যবসা। সেখানেই পরিচয় হয় আমার সঙ্গে। আমি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগ থেকে পাস করেছিলাম তখন। ২০১৮ সালে পটুয়াখালী দাদা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আফিফ দেখেন গ্রামের কারুশিল্পীরা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈজস তৈরি করেন, কিন্তু প্রাপ্য দাম পান না। ওই সব কারুশিল্পীকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকেই আমরা একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করি। সেখান থেকেই শুরু শপআপ। আফিফ জামান এখন শপআপের সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, আমি চিফ প্রোডাক্ট অফিসার এবং আরেকজন উদ্যোক্তা হচ্ছেন শাহিন সিয়াম, তিনি সিএফও।
ঢাকা পোস্ট : শপআপের কার্যক্রম বলুন-
আতাউর রহিম চৌধুরী : মোকাম, রেডএক্স ও বাকি নামে তিনটি সেবা রয়েছে শপআপের। বিটুবি ব্যবসার অ্যাপ মোকামের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাড়ার মুদি দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয় শপআপ। এ জন্য বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পরিবেশক ও পাইকারদের সঙ্গে চুক্তি করছি আমরা। তাছাড়া রেডএক্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের পণ্য কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। গত বছর যাত্রা শুরু করা রেডএক্স বর্তমানে ৪৯৩ উপজেলায় সেবা দিচ্ছে। আর ‘বাকি’ সেবার মাধ্যমে বাকিতে পণ্য কিনতে পারেন ছোট ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা পোস্ট : এই বিনিয়োগ দেশের উদ্যোক্তা তৈরিতে কতটা ভূমিকা রাখবে। শপআপের পরিকল্পনা কি?
আতাউর রহিম চৌধুরী : শপআপের লক্ষ্য হলও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং তাদের ব্যবসার প্রসারণে যে সকল বাধা আছে সেগুলো নিরসনে সাহায্য করা। মোকাম এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ঘরে বসে সহজে সঠিক দামে প্রোডাক্ট কিনতে পারেন একটি অ্যাপের মাধ্যমে এবং রেডএক্স এর মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে ডেলিভারি করতে পারেন। আমাদের মূল পরিকল্পনা হলও ৪৫ লক্ষ মুদির দোকানদারদের দেশের অর্থনীতির চালকের আসনে বসানো।
ঢাকা পোস্ট : শপআপ উদ্যোক্তাদের ঋণ পতে কীভাবে সহায়তা করে?
আতাউর রহিম চৌধুরী : শপআপ মুদি দোকানদারের বাকিতে প্রোডাক্ট কেনার সুবিধা দিয়ে থাকে। মূলত আমরা 'Buy Now, Pay Later' পদ্ধতিটি অনুসরণ করি। দোকানদারদের পূর্ববর্তী বিক্রি পর্যালোচনা করে আমরা দোকানদারদের বাকিতে প্রোডাক্ট কেনার সুযোগ দেই।
ঢাকা পোস্ট : উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচারণায় শপআপের পরিকল্পনা কী কী?
আতাউর রহিম চৌধুরী : যদিও পূর্বে শপআপ প্রোডাক্ট প্রমোশনের সুবিধা দিয়ে থাকতো এখন আমরা মূলত ভালো দামে পণ্য ক্রয় এবং সারাদেশে দ্রুত সময়ে ডেলিভারি সেবা প্রদান করি।
ঢাকা পোস্ট : শপআপে এখন কতজন কর্মী কাজ করছে? নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন?
আতাউর রহিম চৌধুরী : শপআপে ৫ হাজারের বেশি সম্মুখসারির কর্মী কাজ করেন এবং আরও ৪০০ এর বেশি কর্মী কাজ করছেন। আমরা মূলত বিভিন্ন অনলাইন জব পোর্টাল ও সোশ্যাল মিডিয়াতে জব সার্কুলার দিয়ে থাকি। শপআপের লিংডইন পেইজে নিয়মিত জব পোষ্ট করা হয়। এছাড়া আমাদের ‘শপআপ ক্যারিয়ারস’ নামে একটি আলাদা ফেইসবুজ পেইজ আছে, সেখানেও আমাদের বিভিন্ন রোলের জব পোষ্ট দেয়া হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট রোলের চাহিদা অনুযায়ী আমরা নবীন থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ মানুষ চেয়ে থাকি। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা, পেশাগত স্কিল সব বিবেচনার মাধ্যমে প্রাথমিক ইন্টারভিউয়ের জন্য সিভি সর্টিং করা হয়। তারপর ডিপার্টমেন্ট হেড, এইচআর এর উপস্থিতিতে প্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। প্রয়োজনে কোনও টাস্ক দিয়ে প্রার্থীর দক্ষতা যাচাই করা হয় এবং সিনিয়র লেভেলের জবের ক্ষেত্রে সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়ে থাকে
ঢাকা পোস্ট : ভবিষ্যতে আপনাদের লক্ষ্য কী?
আতাউর রহিম চৌধুরী : শপআপের মূল লক্ষ একটাই- প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন, কারণ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস উদ্যোক্তারা এগিয়ে গেলেই, এগিয়ে যাবে পুরো দেশ। আপনারা জানেন দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশি থানায় উপস্থিত থেকে রেডএক্স এখন দেশের সবচেয়ে বড় লজিস্টিকস প্ল্যাটফর্ম, ভবিষ্যতে আমরা মোকামকেও বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় নিয়ে যেতে চাই। এর জন্য আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বেশ কিছু জায়গা রয়েছে। আমরা চাই দেশের ৪৫ লক্ষ ক্ষুদ্র রিটেইলার ভাই-বোনদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালকের আসনে বসাতে। তাছাড়া আমরা সবসময়ই নিজেদের একটি ‘মার্চেন্ট ফার্স্ট’ কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করি। তাই সার্ভিস লেভেলে আরও উন্নয়ন আমাদের জন্য একটি বিশেষ প্রায়োরিটি।