ছোটবেলায় তেমন ভালো ছাত্রী ছিলাম না: মুনজেরিন শহীদ
শহরে নয়া শিক্ষিকা এসেছেন। ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের হ্যান্ডেল ঘাঁটলেই তার ভিডিও চোখে পড়ে। কখনো শেখাচ্ছেন দ্রুত ইংরেজি বলার কৌশল, কখনো আবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন করপোরেট ইংরেজির ফিরিস্তি। বলছিলাম মুনজেরিন শহীদ-এর কথা। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। বলেছেন না বলা অনেক কথা।
ঢাকা পোস্ট : আপনাকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। জানতেও চাই অনেক কিছু। তবে শুরু হোক, আপনার ছোটবেলার গল্প দিয়ে...
মুনজেরিন শহীদ : বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়েছি। ছোটবেলা কেটেছে চাচাতো-ফুফাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে। এখনকার মত কাজের প্রেশার ছিল না। খুব আনন্দ ফুর্তি করে সময় কেটেছে তখন। ঢাকায় স্থায়ী হয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে। বর্তমানে পড়াশোনা করছি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কয়েকমাস ধরে ঢাকাতে আছি। ছুটি কাটাচ্ছি।
ঢাকা পোস্ট : ইংরেজি নিয়ে সবার মধ্যেই ভীতি কাজ করে। এমন একটি ভাষাকে সবার কাছে মজাদার করে তুলেছেন। এক কথায় ইংরেজি পড়িয়ে ‘ইংরেজি আপা’ বনে গেছেন। পড়ানোর এতো বিষয় থাকতে, ইংরেজিই কেন বেছে নিলেন?
মুনজেরিন শহীদ : ইংরেজির প্রতি ঝোঁক স্কুল থেকেই। তখন থেকেই ইংরেজি ভাষার গল্পের বই আমাকে টানত। সহপাঠীদের ইংরেজি শেখাতেও বেশ ভালো লাগতো। তবে কখনো স্টুডেন্ট পড়ানো হয়নি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করার পর বন্ধুরা অন্যদের ইংরেজি শেখানোর জন্য উৎসাহ দিতে লাগলো। এর ক’দিন পরেই শুরু হলো লকডাউন। তখন সব কিছু বন্ধ। কিছুটা হতাশায় ভুগছিলাম। এই হতাশা থেকে বের হওয়ার জন্যই কন্টেন্ট বানানো শুরু করি। এছাড়াও সব সময় দেখে এসেছি, ইংরেজি নিয়ে সবার মধ্যে ভীতি কাজ করে। ভাবলাম, এই ভীতিটা দূর করানোর জন্য কাজ করা যেতে পারে। এরপরেই শুরু করলাম সহজভাবে ইংরেজি শেখানো।
ঢাকা পোস্ট: টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
মুনজেরিন শহীদ: শুরু করেছিলাম ব্লগ রাইটার হিসেবে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া টিম ও কুইজ টিমসহ বিভিন্ন টিমের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়। সেখান থেকে হিউম্যান রিসোর্স টিমে কাজ শুরু করি। বর্তমানে হেড অফ হিউম্যান রিসোর্সার হিসেবে নিযুক্ত আছি। গতবছর থেকে টেন মিনিট স্কুলে নিয়মিত ইংরেজি পড়ানোর সুযোগ পাওয়ায় এখন ইংরেজির প্রজেক্টগুলোও দেখছি।
ঢাকা পোস্ট : পড়াশোনা করছেন ঢাকা ও অক্সফোর্ডের মতো নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোটবেলায়ও কি পড়াশোনায় এতোটা এগিয়ে থাকতেন? মানে ফাঁকিবাজি করতেন না?
মুনজেরিন শহীদ: ছোটবেলায় তেমন একটা ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না। আমি বরাবরই অংকে কাঁচা ছিলাম। তবে ইংরেজিতে আমার ঝোঁক ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, স্কুলে অনেক দুষ্টুমি করতাম। দুষ্টুমির জন্য বহুবার স্যার ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন। এরপর ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখন অবশ্য শাস্তিটাও উপভোগ করতাম। কিন্তু এখন এ কথা বললে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। তবে আমি ছোটবেলায় অনেক দুষ্টু ছিলাম, এটা সত্য। এ জন্য মায়ের হাতে মারও খেয়েছি অনেকবার।
ঢাকা পোস্ট : এখনও মেয়েদের অনেক বাধা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে উঠে এসে আপনি এখন সারাদেশের শিক্ষার্থীদের আইডল। এর পেছনে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে?
মুনজেরিন শহীদ: একজন মেয়ের হাজারও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। টুকটাক আমাকেও সেসব বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে বা হয়। আমি ভিডিওতে ইংরেজি শেখাই। অনেকে এখানে এসেও নেতিবাচক কমেন্ট করেন। বেশিরভাগই আমি ইগনোর করি। তবে যেসব গঠনমূলক কমেন্ট থাকে, সেগুলো গ্রহণ করি। নিজের ভুল-ত্রুটি থাকলে, সেসব সংশোধন করার চেষ্টাও করি।
ঢাকা পোস্ট : অনলাইন ভিত্তিক ক্লাসের ভবিষ্যৎ কেমন?
মুনজেরিন শহীদ: অনলাইন শিক্ষার দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা করোনাকালীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ অবস্থায় অনলাইন শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। আমাদের দেশে যদিও অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে, তবে অন্যান্য দেশে অনেক আগে থেকেই এর প্রচলন ছিল। যেমন- কোর্সেরা, ইউডেমি, লিংকদিন লার্নিংয়ের মতো বড় প্ল্যাটফর্মে মানুষ ঘরে বসেই বিশ্বমানের ডিগ্রি অর্জন করছে। সবাই আস্তে আস্তে অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারছে। আমরাও টেন মিনিট স্কুলে এ ধরনের অনেক কোর্স চালু করেছি।
ঢাকা পোস্ট : দেশের বাইরেও আপনার পড়াশোনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশি শিক্ষা ব্যবস্থার কোন কোন পার্থক্য আপনার চোখে ধরা পড়েছে?
মুনজেরিন শহীদ : বেশকিছু পার্থক্য আমি লক্ষ্য করেছি। যেমন, বাইরের দেশে শিক্ষার্থীদের অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়। তারা যেভাবে খুশি সেভাবে শিখতে পারে। ফলে তারা নিজেদের পড়াশোনার প্রতি দায়িত্ববান। এছাড়াও সেখানে ক্লাসে উপস্থিতির জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ঢাকা পোস্ট : যারা বাইরের দেশে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক তাদের প্রতি কোনো পরামর্শ...
মুনজেরিন শহীদ : দেশের বাইরে পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল ভালো করতে হবে। কেননা বাইরের দেশে রেজাল্ট অনেক গুরুত্ব বহন করে। এছাড়াও নিজেকে ক্লাসরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলামের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে।
ঢাকা পোস্ট : ভবিষ্যতেও মুনজেরিনকে শিক্ষকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে দেখা যাবে?
মুনজেরিন শহীদ : অবশ্যই। ভবিষ্যতেও ইংরেজি শেখাবো। ইতোমধ্যে আমার ২টি কোর্সে ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ক্লাস করেছে। তাছাড়া এ বছর আমার আরও দুটি কোর্স বের হবে। স্পোকেন ইংলিশ ফর কিডস ও আইইএলটিএস কোর্স। এ বছরও আমার বই এসেছে। এগুলো হলো- ঘরে বসে স্পোকেন ইংলিশ ও সবার জন্য ভোকাবোলারি। এর বাইরেও আইইএলটিএস নিয়ে বই বের করতে চাই। ছোটদের জন্য বই বের করতে চাই। ইংরেজি গ্রামার নিয়ে বই বের করতে চাই। সবই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই সবগুলো বই সবার হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।