‘স্বপ্ন’ শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে দক্ষতাকে বেশি মূল্যায়ন করে
দেশের জনপ্রিয় ও আস্থাশীল সুপার শপগুলোর একটি ‘স্বপ্ন’। মানবিক ও মধ্যব্ত্তিবান্ধব সুপার শপ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছিল তারা। চলতে চলতে প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেকটাই পরিণত। এই পথ চলার জাদুমন্ত্র, নিত্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি ও কর্মীদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার বিষয় ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হয়েছেন স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির।
ঢাকা পোস্ট: স্বপ্ন’কে আজকের পজিশনে আনার পেছনের জাদুমন্ত্রটা কি?
সাব্বির হাসান নাসির : আমাদের একটা ভ্যালুস ট্রি (নৈতিকতার বৃক্ষ) আছে। এ দিকে তাকিয়েই পথ চলি। বলছি না, আমরা ভুল করি না। তবে সে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে ক্রেতাদের জন্য পরিকল্পনা সাজাই। ক্রেতাদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি। সমস্যাগুলো ধরে ধরে কাজ করি। এ ব্যাপারে স্বপ্ন’র পুরো পরিবার সচেতন। এটাই অন্যদের চেয়ে আমাদের আলাদা করেছে। অন্যভাবে বলতে গেলে, কাঁচাবাজার থেকে মধ্যবিত্তদের সুপারমার্কেটে ঢুকানোর কৃতিত্বটা স্বপ্নেরই। মধ্যবিত্তের জন্য ভার্চুয়াল লুপ তৈরি করে পণ্যের দাম কমিয়েছি। এই লুপটি স্বপ্নের সবচেয়ে বড় মন্ত্র ও অস্ত্র। স্বপ্নর’র দাম কমানো দেখে অন্যরা যখন দাম কমাতে শুরু করে, তখন আমরা বিশুদ্ধ খাদ্যের কথা বলেছি। নিজস্ব ল্যাব স্থাপন করে পণ্যের মান নিশ্চিত করেছি। কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি। অটিজম নিয়ে কাজ করেছি। ধীরে ধীরে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছি। মূলত একটি মানবিক ব্র্যান্ড হিসেবে স্বপ্নকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
ঢাকা পোস্ট: স্বপ্নে কোন কোন পদে নিয়মিত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়?
সাব্বির হাসান নাসির : আমাদের বড় একটি অংশ নিয়োগ দেওয়া হয় আউটলেটের জন্য। ড্রিম অ্যাটেনডেন্ট, ক্যাশিয়ার, ফ্রেশনেস অ্যাটেনডেন্ট, আইসিএমও, আউটডোর ম্যানেজার, ব্যাক স্টোর ম্যানেজার, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজারসহ কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয়ের জন্যও বহু লোকের কর্মসংস্থান হয় এখানে। এছাড়াও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ভিজুয়াল মর্চেন্ডাইজিং, ডিজাইনিং, রিটেইল আর্কিটেকচার, ডেটা সায়েন্স, ই-কমার্স, ডিস্টিবিউশন, কমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে স্বপ্নতে ৪ হাজারের বেশি লোকবল রয়েছে।
ঢাকা পোস্ট: আপনারা চাকরি প্রার্থীর কোন কোন বিষয়গুলো মূল্যায়ন করেন?
সাব্বির হাসান নাসির : ‘স্বপ্ন’ শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে দক্ষতাকে বেশি মূল্যায়ন করে। বিশেষ করে পদ অনুসারে প্রার্থীর কাজের দক্ষতা ও সম্যক জ্ঞান কেমন- সে বিষয়ে গুরুত্ব দিই। সবসময় স্কিলের দিকে ফোকাস করি। ধরুন আপনি ভিডিও বানান। এক্ষেত্রে আমার তো জানার দরকার নেই, আপনি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন নাকি সমাজবিজ্ঞানে পড়েছেন। আমি দেখবো আপনি যে ভিডিও বানাচ্ছেন সেটা কেমন হচ্ছে। বিশেষ করে স্ক্রিপ্ট রাইটিং কেমন, কালার কারেকশন ও এডিটিং স্কিল কেমন। যে ছেলে আউটলেট চালাবে তার এমবিএ ডিগ্রি আছে কিনা সেটা আমার জানা দরকার নেই। আমার জানা দরকার সে কাস্টমারের সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতে পারে কিনা, ডাইনামিক, ফাস্ট ও দায়িত্ববান কিনা? আমরা প্রার্থীর কাজের ব্যবহারিক দক্ষতা, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং রেলিভেন্ট স্কিল সবসময় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি।
ঢাকা পোস্ট: চাকরি প্রার্থীর দক্ষতাকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
সাব্বির হাসান নাসির : প্রার্থী যে পদে কাজ করবেন আমরা সেই পরিবেশে তাকে নিয়ে যাই। যেমন আউটলেটের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে আউটলেটে কিছু সময় কাজটি করতে দিই। কাজটি সে কিভাবে করছে, সেটা মূল্যায়ন করি। কখনো কখনো বিভিন্ন পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে জানতে চাই, এ পরিস্থিতিতে সে কি করবে। সাপোর্ট অফিসে অ্যানালিটিকাল হিসেবে যারা কাজ করবে, তাদের একটা প্রবলেম দিয়ে সমাধান করতে বলা হয়। আমরা তাদের প্রবলেম সলভিং স্কিলকে মূল্যায়ন করি।
ঢাকা পোস্ট: কর্মীদের জন্য স্বপ্নের সুদূরপ্রসারী কোনও পরিকল্পনা আছে?
সাব্বির হাসান নাসির : আমরা শুরু থেকেই কর্মী বান্ধব একটি প্রতিষ্ঠান। এমনকি খুব শিগগিরই আমরা ফিক্সড পে থেকে ভেরিয়েবল পে’র দিকে যাচ্ছি। এরফলে একজন কর্মী যদি উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে ব্যবসায় উন্নতি করতে পারে, সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য বাড়তি সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া আরও বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
ঢাকা পোস্ট: নারীদের জন্য কি কি সুবিধা দিচ্ছে ‘স্বপ্ন’?
সাব্বির হাসান নাসির : স্বপ্ন'র মোট কর্মীর ৩০ ভাগই নারী। নারীদের জন্য বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তাদের ৪ মাস মেটারনিটি ছুটি ছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যার মধ্যে ছুটি দেওয়ার হয়। কারও বিরুদ্ধে নারী কর্মীদের হয়রানির অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সব মিলিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য পাঁচটি নিরাপদ জায়গার একটি ‘স্বপ্ন’।
ঢাকা পোস্ট: করোনাকালীন সময়ে স্বপ্ন’র মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাই।
সাব্বির হাসান নাসির : আমরা মনে করি মানুষের জন্য কর্মসংস্থানটা জরুরি। আপনি একবার সহযোগিতা করতে পারেন, কিন্তু সেটা দীর্ঘমেয়াদী হয় না। ফলে আমরা প্রথমেই ফোকাস করেছি কর্মসংস্থানের উপর। যাদের কথা কেউ ভাবছে না আমরা তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। বিশেষ করে, তৃতীয় লিঙ্গ, উপজাতি, মিউজিশিয়ান বা ফ্রিল্যান্সারসহ যারা করোনার কারণে বেকার হয়েছে, তাদের নিয়ে কাজ করেছি। এছাড়াও লকডাউন এরিয়াতে ভ্যান দিয়ে প্রডাক্ট ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছি। লকডাউনে কৃষকদের কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনে কাস্টমারদের দিয়েছি। এমনও হয়েছে বাবা বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করতে এসেছে। আমরা তাকে পুলিশের কাছে না দিয়ে বরং চাকরির ব্যবস্থা করেছি। কারণ, মানবিক সমাজ তৈরি করাই স্বপ্ন’র মূল উদ্দেশ্য।