ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে পাস না করেও ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব
তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বিস্তার ঘটছে ই-কমার্স সেক্টরের। তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন কর্মক্ষেত্র। তরুণদের মাঝেও এ সেক্টরে কাজের আগ্রহ বাড়ছে। সেখানে চাকরির বাজার কেমন? দক্ষতা লাগে কেমন? ভবিষ্যৎ কী? এসব বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ইভ্যালির হিউম্যান রিসোর্স ও প্রশাসন বিভাগের পরিচালক সাবরিনা নাসরিন
ইভ্যালিতে কোন কোন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ আছে?
যেহেতু ইভ্যালির অগ্রগতি বেড়েই চলছে তাই এখানে সব বিভাগেই কাজের সুযোগ রয়েছে। আমরা তরুণদেরকে একটু বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। প্রবীণদেরকে যে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না, এমনটি নয়। তাদের যে অভিজ্ঞতা, কাজের পরিধি-সেগুলো ভবিষ্যতে আমাদের কাজে দিবে। একমাস আগে আমরা একটি মেগা নিয়োগ দিয়েছি। যেখানে এইচআর, আইটি,বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ প্রত্যেকটা বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এখন আমরা বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগে বেশি লোক নিচ্ছি। তরুণদের নিচ্ছি, অভিজ্ঞ হলে ভালো। যাদের নতুন করে শেখাতে পারবো এবং যাদের দৌড়ঝাঁপ করে কাজ করার ইচ্ছা আছে-তাদেরকেও নেওয়ার প্ল্যান করছি। এইচআর বিভাগে অল্প কিছু স্কোপ আছে যেখানে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন কোন দক্ষতাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রথম প্রায়োরিটি দিচ্ছি নতুনদের । এছাড়াও প্রার্থীকে নতুন প্রযুক্তি (সফটওয়্যার, ল্যাপটপ) নিয়ে ভালো ধারনা থাকতে হবে। প্রার্থী যে সেক্টরে কাজ করতে চায়, সেখানে তার দখলটা কতখানি-
আমরা সেটাও মূল্যায়ন করি। যেমন-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চাকরি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা নিই। প্রার্থী তার কাজের প্রতি কতটুকু প্যাশনেট এবং তার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়ন করি। অভিজ্ঞ প্রার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার বয়সসীমা এবং সফলতার হার বিবেচনায় নিই।
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ-সুবিধা কেমন?
আমাদের দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি বড় হচ্ছে। এখন তো কেবল শুরু। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় বড় কোম্পানি আসবে, আমরাও আরও বড় হব। এখানে কাজের স্কোপ রয়েছে। সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমরা আমাদের উদাহরণ দিয়েই বলি। আমরা এক সময় ছোট্ট একটা টিম নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এখন ১ হাজারের অধিক কর্মীকে নিয়ে কাজ করছি। আমরা খুব কম সময়ে এতগুলো মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে যদি আরও কোনও কোম্পানি আসে এবং এখন যারা রয়েছে- তারা চেষ্টা করলে আরও বেশি স্কোপ তৈরি করতে পারবো।
প্রার্থীর ভাইভাতে কোন কোন দক্ষতাগুলো আমলে নেন?
আমাদের এখানে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল ভাইভা হয়। কোভিডের কারণে যারা ঢাকার বাইরে আছেন, নতুন করে চাকরি খুঁজছেন; তাদেরকে হয়তো আমরা অনলাইনে একটা ইন্টারভিউ নিই। তারপর শর্ট লিস্টেড হলে ফিজিক্যাল ভাইভার জন্য অফিসে আমন্ত্রণ জানাই। ওটাই তার মূল ভাইভা হিসেবে কাজ করে। ভাইভাতে আমরা তার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, অ্যানালিটিকাল এভিলিটি মূল্যায়ন করে থাকি। প্রার্থীর উৎসাহ ও আগ্রহটাও আমরা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি।
কর্মীদের জন্য ইভ্যালির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? নারীদের জন্য ইভ্যালিতে কাজের সুযোগ কেমন?
অবশ্যই আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমাদের কোম্পানিকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের জন্য যে মানদণ্ড নিয়ে আগাচ্ছে, আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। এশিয়ার দেশগুলোতে নারীদের চাকরির সুযোগ সত্যিকার অর্থেই কম। এখানে কেউ কেউ সুযোগ পায়, আবার অনেকে পায় না। ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিষ্ঠানে মেটারনিটি ছুটি ৬ মাস নির্ধারণ করেছি। তাদের বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরি করার ইচ্ছা আছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে পুরুষ ও নারী কর্মীর অনুপাত ষাট শতাংশ থেকে চল্লিশ শতাংশ। প্রত্যেকটা বিভাগে মোটামুটি এই অনুপাতেই রয়েছে। তবে প্রডাক্ট ডেলিভারি সেক্টরে নারী কর্মী নেই। কারণ আমাদের দেশে নারীদের জন্য ওই নিরাপত্তা এখনো ব্যবস্থা করতে পারিনি।
নতুনদের জন্য কী পরামর্শ দিবেন?
আমাদের দেশে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ যে তৈরি হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। অনেকের কাছে মানসিকভাবে গেঁথে যায় , আমি যদি একটা ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করতে না পারি তাহলে আমার চাকরি হবে না। এগুলো ভুল ধারনা। আমার মতে আপনি কতটা বুদ্ধিমান, কতটা ডেডিকেটেড- এই জিনিসটা প্রাধান্য দেয়। আমি বিশ্বাস করি, ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে পাস না করেও ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব। এজন্য পাঠ্য বইয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে শেখার পরিধি বাড়াতে হবে। বিজনেস সেক্টরে যারা পড়ছেন তাদেরকে বলবো প্রচুর পরিমাণে কেস স্টাডি করুন। সফলতা আসবেই।