বছরজুড়ে সারা বিশ্বে চাকরির বাজার কেমন ছিল?
চলতি বছরের শুরু থেকেই করোনা পরবর্তী ধাক্কা সামলে কিছুটা স্বাভাবিক রূপ পেয়েছে বিশ্ব। উল্টো চিত্র ছিল চাকরির বাজারে। বিশ্বের নামিদামি সব প্রতিষ্ঠানগুলো দলবেঁধে কর্মী ছাঁটাই, নতুন নিয়োগ স্থগিত, আশানুরূপ বেতন বৃদ্ধি না হওয়া, কাজের পরিবেশের আমূল পরিবর্তনসহ ভয়ানক টালমাটাল এক সময় পার করেছে কর্মসংস্থান খাতটি।
কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট অনেকেই ভেবেছিলেন, চলতি বছর অন্যান্য খাতের পাশাপাশি চাকরির বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে ধারণাটি যে ভুল ছিল, তা ইতোমধ্যেই পরিষ্কার হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে যাদের চাকরি গেছে, তাদের অধিকাংশই কাজে ফিরতে পারেনি।
আরও পড়ুন> সিভিতে যে ৮ স্কিল উল্লেখ করলে চাকরি হবেই
এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক দৈন্যদশা সামলাতে না পেরে কারখানা বন্ধ করেছে, তারাও স্বাভাবিক ভাবে আর ফিরতে পারেনি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চাকরির বাজারে। অদক্ষ বেকারের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ চাকরিচ্যুত বেকার। যা এই খাতটিকে আরও ভারসাম্যহীন করে তুলেছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের চাকরির বাজার তো বটেই, বাদ যায়নি উন্নত দেশগুলোও। বিশেষ করে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো দলবেঁধে ছাড়াই করেছে। এরমধ্যে রয়েছে অন্যতম টুইটার, মেটা, ফিলিপস, অ্যামাজন, অ্যাপল, মাইক্রোসফটসহ ডজন খানেক আইটি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান, গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ফুড ও বেভারিজ ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী ছাঁটাই করেছে।
আরও পড়ুন> মেটা থেকে অ্যামাজন : যে কারণে ছাঁটাই বেশি, নিয়োগ কম
বিশেষজ্ঞদের মতে দ্রুতগতিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের বিপরীতে নতুন কর্মী নিয়োগ হয়েছে ধীরে-সুস্থে। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কর্মী নিয়োগের মন্থর গতি শুরু হয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারির শুরুর দিকেই। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলো নতুন কর্মী নিয়োগের চেয়ে ব্যয় কমিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে চেয়েছে। মূলত তারই ফলস্বরূপ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে এসব কোম্পানি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চাকরির বাজারে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ ভারতের চিত্র আরও ভয়াবহ। দেশটির র্স্টাট-আপ প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সংকটে নিয়মিতই কর্মী ছাঁটাই করছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন মতে, গত নভেম্বরে ভারতের কর্মহীন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও ৮ শতাংশ মানুষ।
গত তিন মাসের মধ্যে নভেম্বরে ভারতে নতুন বেকার হওয়া লোকজনের হার সর্বোচ্চ ছিল বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির অলাভজনক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইএ)।
শহর অঞ্চলে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার গ্রামের চেয়ে বেশি। সিএমআইএ’র তথ্য বলছে, নভেম্বরে ভারতের নগরাঞ্চলে কর্মহীন হয়েছেন ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ মানুষ, গ্রামে এই হার ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর আগের মাস অক্টোবরে শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২১ শতাংশ, আর গ্রামাঞ্চলে এই হার ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন> চাকরিচ্যুত ব্যাংকাররা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে
প্রাসঙ্গিক ভাবেই বাংলাদেশের পরিস্থিতিও টানতে হচ্ছে। সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও নতুন নিয়োগে চলছে মন্থর গতি। করোনার মধ্যে জমে থাকা নিয়োগ পরীক্ষার পরবর্তী সময় সরকার দ্রুত সময়ের নিলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাছাড়া পর্যটন খাতসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেকার হয়েছে হাজার হাজার কর্মী।
তবে চলতি বছরের শেষ দিকে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ৩৭ হাজার লোকবল নিয়োগ দিয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরের সরকারি কোনো একক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় নিয়োগ। তবে এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
এছাড়া বিসিএস, জুডিশিয়ারি, ব্যাংক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী সহ সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে বিভিন্ন গ্রেডের লোকবল নিয়োগ দিয়েছে। আরও বেশ কিছু চলমান আছে। এতো কিছুর পরেও বাংলাদেশের বর্তমান বেকার অর্ধ কোটির বেশি।
আরও পড়ুন> সিজিপিএ কম থাকার পরেও ভালো চাকরি পাবেন যেভাবে
পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে চলছে নানাবিধ সমস্যায়। সময় মতো বেতন হয় না, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট নিয়ে টালবাহানা, কম বেতনে কর্মী নেওয়া ও প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক কর্মী দিয়ে অফিস চালনার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
আর্থিক চাপ সামলাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় সংকোচন নীতি হাতে নিয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চাকরির বাজারেও। তবে এরমধ্যেও দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপগুলো নিয়মিত নিয়োগ দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম প্রাণ আরএফএল গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ ও ইউএস-বাংলা গ্রুপ অন্যতম। যদিও দেশের বর্তমান চাকরি প্রত্যাশীদের চেয়ে এই নিয়োগ নগণ্যই বলা চলে।