এই বিষয়টি না জানলে কর্মক্ষেত্রে টিকতেই পারবেন না
চাকরি করছেন ঠিকই, কিন্তু টুকিটাকি টেকনিক্যাল কাজ করতে অন্য সহকর্মীর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। যেমন, ইমেইল আদান প্রদান, অফিসের সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডাটা ইনপুট, আউটপুট করা, স্টোকহোল্ডারদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে যোগাযোগ রাখা কিংবা জরুরি মুহূর্তে অনলাইনে মিটিংয়ে লিংকআপ করতে সহকর্মীকে অনুরোধ করতে হচ্ছে। খোলসা করে বললে, ন্যূনতম ডিজিটাল স্কিল ছাড়া বর্তমান সময়ে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা সত্যিকার অর্থেই কষ্টসাধ্য।
এ নিয়ে বিবিসির ওয়ার্ক-লাইফ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল স্কিল বা সর্বশেষ তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে অসচেতন কর্মীরা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে বেশ বিপাকে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবেদনটিতে কেন ডিজিটাল স্কিল থাকা এতো জরুরি, সে বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : সিভিতে যে ৮ স্কিল উল্লেখ করলে চাকরি হবেই
একটা সময়ে মনে করা হতো, ডিজিটাল স্কিল মানে কম্পিউটার চালনার বেসিক নলেজ। তখন শুধু মেইল আদান প্রদান, ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের কাজ জানাকেই ডিজিটাল স্কিল মনে করা হতো। তবে এই ধারণায় অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। এখনকার ডিজিটাল স্কিলের পরিধি বেশ পরিপক্ব।
বর্তমানে ডিজিটাল স্কিল বলতে বোঝানো হয় এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যের বিন্যাস ঘটানো যায়। সেসব তথ্যকে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগে রূপান্তর করা সম্ভব। সেটা হোক কম্পিউটার ডিভাইস ব্যবহার করে অথবা স্মার্টফোন ব্যবহারের মাধ্যমে।
ডিজিটাল স্কিল বলতে এখন আর হার্ডওয়ার সংক্রান্ত বিষয়ে আবদ্ধ নেই। ধারণাটি দিনকে দিন আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে। একটু সহজ করে বলি। ধরুন আপনি সংবাদ মাধ্যমে কাজ করছেন। আপনার কাজ হচ্ছে সংবাদ সম্পাদনা করা। একটা সময়ে আপনাকে টাইপিং জানলেই হতো।
আরও পড়ুন : চাকরির আবেদনপত্র লিখবেন যেভাবে
এখন দ্রুত সময়ে সম্পাদনা, সফটওয়্যার ব্যবহার করে বানান ঠিক করা, ব্যাকরণ ঠিক করা, একই লেখা অন্য কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে কিনা, তা ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুঁজে বের করা, আপনার তৈরি করা সংবাদটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং করাসহ নানাবিধ টেকনিক্যাল বিষয়ে জানাশোনা থাকতে হয়। বিশেষ করে ছবি সাইজ করা ও এ জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা থাকা ডিজিটাল স্কিলের মধ্যেই পরে। এসবের একটিও যদি আপনি না জানেন, তবে কর্ম ক্ষেত্রে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে টিকে থাকতে পারবেন না।
আরও একটি উদাহরণ দিই। ধরুন আপনি ব্যাংকে চাকরি করেন। একটা সময় হিসাব খাতায় অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নাম লিখে এন্ট্রি করা হতো। এখন পুরো কাজটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা। এমনকি চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো অনলাইনে লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটিই ব্যাংকের নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হয়। সুতরাং বর্তমান সময়ে কেউ ব্যাংকে চাকরি করতে হলে তাকে কম্পিউটার চালনার পাশাপাশি এসব বিষয়েও জানাশোনা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন : এনজিও চাকরি : ইন্টারভিউ বোর্ডে কী প্রশ্ন হয়, যেভাবে উত্তর দেবেন
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল স্বাক্ষরতা যতটা না ফাংশনাল ততটাই মানসিক। অর্থাৎ মানসিক ভাবে আপনি কতটা আধুনিক সেটাও ডিজিটাল সাক্ষরতার একটি অংশ। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই চায়, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর ওয়ার্ক প্লেস তৈরি করতে। সেখানে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাশোনা থাকতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ডিজিটাল স্কিল যে কারণে সবার দরকার
ডিজিটালের ধারণাটাই হলো, যেকোনো কঠিন কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সহজ উপায়ে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি দোকান চালনা থেকে শুরু করে প্রিন্ট করা, ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা বিশ্লেষণ, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও কোডিং পর্যন্ত করা সম্ভব।
চাকরির বাজারে ডিজিটাল স্কিলের চাহিদা মূলত আশির দশকে শুরু হয়েছে। কিন্তু দিন যতই গড়িয়েছে, ততই এর চাহিদা, গ্রহণযোগ্যতা, প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। এমনকিই বেড়েই চলছে।
আরও পড়ুন : নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেতনের কথা উল্লেখ থাকে না কেন?
কার্যতই নিয়োগকর্তাও চান, একজন কর্মীর মধ্যে কিংবা একজন চাকরি প্রার্থীর মধ্যে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকুক। তবে সব প্রযুক্তি সম্পর্কেই যে ধারণা থাকতে হবে, এমনটি নয়। আপনি যে কাজ করছেন, ওই সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে একটা ধারণা থাকতে হবে। যাতে যেকোনো বিষয়েই আপনি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারেন।
ধরুন, আপনি এইচআর ও এডমিনে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে অফিস ম্যানেজমেন্ট টুলস, এক্সেলের কাজ, পাঞ্চ মেশিন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও অফিসের সব কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে। ই-মেইলে তথ্য আদান প্রদানের দক্ষতা থাকা আবশ্যক। কিংবা ছুটির দরখাস্ত গ্রহণে গুগল ফর্ম ব্যবহার করা।
অর্থাৎ গতানুগতিক কাজ গুলোই দ্রুত ও সহজ উপায়ে করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকাকেই ডিজিটাল স্কিল বা ডিজিটাল স্বাক্ষরতা বলা হচ্ছে। ফলে বর্তমান সময় তো বটেই, ভবিষ্যতেও একজন কর্মী নিজেকে কর্মক্ষেত্রে টিকিয়ে রাখতে চাইলে ডিজিটাল স্কিল দিয়েই থাকতে হবে।