পুরো ইউক্রেন দখলের ইচ্ছা নেই: পুতিন
সদ্য স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় গণপ্রজাতন্ত্রী দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে কিয়েভের আগ্রাসন থেকে রক্ষার জন্য দেশটিতে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া ইউক্রেন দখলে নেওয়ার রাশিয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, সামরিক অভিযানের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো— গত আট বছর ধরে কিয়েভ শাসকদের গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া লোকজনকে রক্ষা করা। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে অসামরিকীকরণ এবং নাৎসিবাদমুক্ত করবে মস্কো। এছাড়া যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে বহুমুখী নৃশংসতা চালিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখলে নেওয়ার কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই মস্কোর। রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডগুলো দখলের পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা কারও ওপর জোর করে কোনো কিছু আরোপ করতে যাচ্ছি না। কিয়েভের সৈন্যরা এখনও রাশিয়ার স্বাধীন ঘোষণা করা দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ করছে।
ইউরোপে যুদ্ধ ফেরালেন পুতিন: ইইউ প্রধান
ইউরোপে যুদ্ধ ফিরিয়ে আনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতা দুর্বল করার জন্য ‘ব্যাপক’ নিষেধাজ্ঞার একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হবে।
তিনি বলেন, এই প্যাকেজে আমরা রাশিয়ার প্রধান প্রধান প্রযুক্তি এবং বাজারে প্রবেশ ঠেকানোর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতির কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করব। আমরা রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং এর আধুনিকায়নের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেব।
এছাড়াও আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার সম্পত্তি জব্দ এবং ইউরোপের আর্থিক বাজারে রুশ সব ব্যাংকের প্রবেশ বন্ধ করব। নিষেধাজ্ঞার প্রথম প্যাকেজের মতো আমরা অংশীদার এবং মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট। এসব নিষেধাজ্ঞা ক্রেমলিনের স্বার্থ এবং যুদ্ধে অর্থায়নের ক্ষমতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলার জন্য সাজানো হয়েছে।
রুশ বোমা হামলায় ইউক্রেনে নিহত ৭
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের বন্দরনগরী ওডেসায় রুশ সেনাবাহিনীর বোমা হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্দরনগরী ওডেসার বাইরের পোডিলস্ক শহরে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটে রাশিয়ার বোমা হামলায় ৭ জন নিহত ও আরও সাতজন আহত হয়েছেন।
এছাড়া বোমা হামলার পর থেকে পোডিলস্কে নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১৯ জন। মারিউপোল শহরে বোমা হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনের পুলিশ জানিয়েছে।
ইউক্রেনে মাশার্ল ল জারি, বিজয়ের শপথ জেলেনস্কির
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দেশের সামরিক অবকাঠামো এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। এমন অবস্থায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দেশজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয়ের শপথও করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদমে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর ওই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে, বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে আর্টিলারি আক্রমণের কবলে পড়েছে ইউক্রেন। হামলার জবাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও গোলা ছুড়ছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুশ-সমর্থিত পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের হাতে ইউক্রেনের সরকার নিয়ন্ত্রিত শচস্ত্য শহরের পতন হয়েছে। তীব্র উত্তেজনার মাঝে জেলেনস্কি ইউক্রেনজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।
সূত্র: এএফপি, আরটি, বিবিসি, রয়টার্স।
এসএস