ইউরোপে রাশিয়ার মতো গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতা কারো নেই: কাতার
ইউরোপের বার্ষিক গ্যাস চাহিদার যে অংশ রাশিয়া সরবরাহ করে, বিশ্বের অন্য কোনো একক দেশের পক্ষে সেই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতা নেই বলে মনে করেন কাতারের জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রী সাদ আল কাবি।
মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি যদ্দুর জানি, ইউরোপের বার্ষিক যে এলএনজির (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) চাহিদা, তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে। যদি রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ইউরোপে রাশিয়ার সমপরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করার ক্ষমতা বিশ্বের অন্য কোনো দেশের নেই।’
পশ্চিমের দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনকে (ন্যাটো) ঘিরে বেশ কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল রাশিয়া ও তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে ‘সহযোগী’ দেশ হিসেবে মনোনীত করার পর থেকে এই দ্বন্দ্ব রীতিমতো বৈরিতায় রূপ নেয়।
গত ডিসেম্বর থেকে ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে রাশিয়া। এই দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলো প্রায় প্রতিদিনই বলে আসছিল, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করবে।
ইউক্রেনে হামলা হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘নজিরবিহীন’ নিষেধাজ্ঞা জারির হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
অবশেষে গত দুই মাস ধরে চলা এই উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায় সোমবার, ইউক্রেনের দুই পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রুশ স্বীকৃতির পর। পরদিন মঙ্গলবার থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্রগুলো।
ইউরোপে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ করে মূলত নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে। এই পাইপলাইন দিয়ে প্রথমে জার্মানিতে যায় রাশিয়ার গ্যাস, তারপর জার্মানি থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে সরবরাহ করা হয়।
দীর্ঘস্থায়ী শীতকাল ও তীব্র ঠাণ্ডার কারণে বিশ্বের অন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে ইউরোপে তরলীভূত গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা অনেক বেশি।
এদিকে, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব যখন চরম আকার নিচ্ছে, সে সময়— গত ০১ ফেব্রুয়ারি কাতারকে ন্যাটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন জো বাইডেন।
এই স্বীকৃতির সপ্তাহখানেক আগে অবশ্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে ‘বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ বিষয়ক স্থিতিশীলতা’ নিয়ে ভার্চুয়াল এক বৈঠকও করেছিলেন বাইডেন।
মূলত ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করতেই হয়, সেক্ষেত্রে ইউরোপে যেন গ্যাস সরবরাহে কোনো সমস্যা দেখা না দেয়, সেজনই কাতারকে যুক্তরাষ্ট্র কাছে টেনেছে বলে সেসময় মন্তব্য করেছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ।
কিন্তু মঙ্গলবার কাতারের জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রী জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে কাতারের পক্ষে রাশিয়ার বিকল্প হয়ে ওঠা একেবারেই সম্ভব নয়। তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাদ আল কাবি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি গ্যাসের ব্যবসা মূলত চুক্তিভিত্তিক। অর্থাৎ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির ভিত্তিতে এটির বেচা-কেনা চলে।’
‘কাতারের এলএনজি গ্যাসের প্রধান ক্রেতা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই আমাদের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি আছে। আমাদের নিজস্ব চাহিদার ব্যাপারটিও রয়েছে। এসব কারণে রাশিয়ার সমপরিমাণ গ্যাস ইউরোপে সরবরাহ করা আমাদের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়।’
অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, এশিয়ার বিভিন্ন ক্রেতা দেশ ও নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর কিছু পরিমাণ গ্যাস কাতার ইউরোপে সরবরাহ করতে পারবে।
‘কিছু পরিমাণ এলএনজি আমরা সরবরাহ করতে পারব, তবে তা ইউরোপের বার্ষিক চাহিদার ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি হবে না,’— সংবাদ সম্মেলনে বলেন সাদ আল কাবি।
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ