ইউক্রেন সংকট : রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ব্লিংকেনের বৈঠক বাতিল
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে মস্কো ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পর মঙ্গলবার একথা জানান ব্লিংকেন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ না করলে তবেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজি তিনি।
পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে সোমবার ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। এমনকি স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে সেনা পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অবশ্য এর আগে থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় দেড় লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
এই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘আমরা দেখছি (ইউক্রেনে) আগ্রাসন শুরু হয়েছে এবং সংকট সমাধানের কূটনৈতিক পথ রাশিয়া পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিস্থিতিতে (রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে) ওই বৈঠকের কোনো মানে হয় না।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মস্কো যদি নিজের আচরণ’ পরিবর্তন করে তাহলে তিনি এখনও কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এছাড়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ দেশটিতে হামলা ও যুদ্ধসহ আরও খারাপ দৃশ্যপট এড়াতে যেকোনো কিছুই করতে রাজি তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘কূটনৈতিক পথে এগিয়ে যাওয়ার ভান করে কার্যত যুদ্ধ ও সংঘাতের পথে রাশিয়া এগোতে চাইলে সেটি আমরা অনুমোদন করবো না।’
সোমবার রাশিয়ার টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেন কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ এবং এই দেশটি একটি ‘পুতুল সরকারের’ মাধ্যমে চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন কোনোদিনই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না এবং আধুনিক ইউক্রেন রাশিয়ার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে।’
এছাড়া ইউক্রেনকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ধারণাকে রীতিমতো আক্রমণ করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, এটা সরাসরি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। রুশ প্রেসিডেন্টের যুক্তি, রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টা বিবেচনায় নেয়নি ন্যাটো।
ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে মস্কো ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপকে মঙ্গলবার ‘গভীরভাবে বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
এমনকি পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার অধীনস্ত বলে মনে করে থাকেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
টিএম