হিজাবে নিষেধাজ্ঞা ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন : যুক্তরাষ্ট্র
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞার জেরে সৃষ্ট বিতর্কে উত্তেজনার পারদ বেড়েছে অনেকটাই। হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভের পর বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। বিতর্কিত এই ইস্যুটি ভারতের সীমানা পেরিয়েছিল আগেই।
আর এবার হিজাবে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, কর্ণাটকে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। অবশ্য বাইডেন প্রশাসনের কড়া এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ রাশাদ হুসেইন টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, হিজাবে নিষেধাজ্ঞা (মুসলিম) নারীদের কলঙ্কিত করবে এবং আরও দূরে ঠেলে দেবে। তার ভাষায়, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার মধ্যে একজনের ধর্মীয় পোশাক বেছে নেওয়ার ক্ষমতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
— Amb. at Large for International Religious Freedom (@IRF_Ambassador) February 11, 2022
হিজাবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত শুক্রবার দেওয়া ওই টুইট বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় পোশাক পরা বা না পরার বিষয়টি ভারতীয় রাজ্য কর্ণাটকের নির্ধারণ করা উচিত নয়। স্কুল-কলেজে হিজাব পরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা মুসলিম ছাত্রীদের ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন। একইসঙ্গে এটি নারী ও মেয়েদের কলঙ্কিত করবে এবং আরও দূরে ঠেলে দেবে।’
হিজাব নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তার এই মন্তব্যের পর শনিবার সরব হয় ভারতের মোদি সরকার। হিজাবকাণ্ডে চলমান বিতর্ক ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় দাবি করে রাশাদ হুসেইনের বক্তব্যকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও আখ্যায়িত করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একসঙ্গে বিষয়টি আদালতে মীমাংসার অপেক্ষায় বলেও জানায় দিল্লি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য কাঙ্ক্ষিত নয়। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের সাংবিধানিক কাঠামো এবং প্রক্রিয়া, সেই সঙ্গে আমাদের গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রনীতির আদর্শ হল, সমস্যাগুলো বিবেচনা করা এবং তার সমাধান করা। যারা ভারতকে ভালো ভাবে জানেন, তারা এই বাস্তবতা ‘যথাযথ ভাবে’ উপলব্ধি করবেন।’
অবশ্য টুইটারে সরকারি ওই বার্তাটি পোস্ট করতে গিয়ে ‘হিজাব’ শব্দটির উল্লেখ করেননি অরিন্দম বাগচি। একইসঙ্গে সেই বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের নাম, মুসলিম ছাত্রী বা হিজাব-বিতর্কের কথাও উল্লেখ করা হয়নি। অবশ্য নাম না করলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যে হিজাব ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সেটি নিশ্চিত।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা। অন্যদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।
কর্ণাটকের স্কুল-কলেজে হিজাব পরা মুসলিম মেয়েদের ঢুকতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তা বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটির সীমানা ছাড়িয়ে দেশটির বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। হিজাবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ খুলেছেন দেশটির বড় বড় রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরাও।
কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।
উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে। যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।
পরে উদুপির একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রী হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই বিষয়েই কর্ণাটকের হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হিজাব সংক্রান্ত পিটিশনটি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট।
টিএম