সাহসিকতার জন্য কর্ণাটকের সেই ছাত্রীকে ৫ লাখ রুপি পুরস্কার
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধ ঘিরে তীব্র উত্তেজনার মাঝে মুসলিম এক ছাত্রী প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন। গেরুয়া ওড়না পরা একদল ছাত্র-ছাত্রীর ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান ও হেনস্তার মুখে প্রতিবাদ জানানো সাহসী ওই ছাত্রীকে ৫ লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ভারতের মুসলিমদের নেতৃস্থানীয় সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ এই পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে।
একই দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কর্ণাটকের মান্দিয়ার একটি কলেজ চত্বরে গেরুয়া ওড়না পরা একদল ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে একাই দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছেন মুসকান খান নামের ওই ছাত্রী।
পরে তিনি বলেছেন, কলেজে যারা তাকে হেনস্তা করেছে তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত। মান্দিয়ার পিইএস কলেজের অধ্যক্ষ, প্রভাষক এবং সহপাঠীরা তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। শত শত তরুণের সামনে একাই প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন মুসলিম এই ছাত্রী।
— NDTV (@ndtv) February 8, 2022
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী স্কুটার পার্কিংয়ে রেখে কলেজ ভবনের দিকে হাঁটছেন। এ সময় গেরুয়া ওড়না পরা একদল তরুণ ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেয় এবং তার দিকে এগিয়ে যায়। পাল্টা ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেওয়ার সময় এই তরুণীকে ভীত দেখা যায়নি। ওই সময় হাত উপরে তুলে আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে দেখা যায় তাকে। পরে কলেজের অধ্যক্ষ এবং অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে সরিয়ে নেন।
টুইটে জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ বলেছে, নিজের সাংবিধানিক এবং ধর্মীয় অধিকারের জন্য তীব্র প্রতিবাদের মুখে মুসকান খান একাই দাঁড়িয়েছিলেন। তার এই সাহসিকতার জন্য ৫ লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
আরও পড়ুন : ঘোমটা, জিন্স বা হিজাব পরা নারীর অধিকার : প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
এদিকে, নারীরা কোন কাপড় পরবেন, সেটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয় বলে কর্ণাটকের মুসলিম ছাত্রীদের কলেজে হিজাব পরার অনুমতির দাবিতে চালিয়ে আসা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, নারী কোন কাপড় পরবেন, না পরবেন সেটি ঠিক করার অধিকার নারীর এবং ভারতীয় সংবিধানেও তাদের সেই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে টুইটারে দেওয়া ওই বার্তায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লিখেছেন, ‘বিকিনি হোক কিংবা ঘোমটা, জিন্স বা হিজাব যেটাই হোক, তিনি কী পরতে চান তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে একজন নারীর। নারীর এই অধিকার ভারতীয় সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। আর তাই নারীদের হয়রানি করা বন্ধ করুন।’
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা। অন্যদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।
কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।
সূত্র: মিড ডে।
এসএস