নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত যারা
প্রকৃতির নানা জটিল বিষয়কে সহজ-সাবলীল এবং আনন্দদায়কভাবে উপস্থাপন করে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাওয়া ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক ডেভিড অ্যাটেনবরো, জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বেলারুশের ভিন্নমতাবলম্বী ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা রাজনীতিবিদ সেভেৎলানা টিখানোভস্কায়া চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন।
নরওয়ের আইনপ্রণেতারা চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাদের নাম মনোনীত করেছেন। অতীতে নরওয়ের এই আইনপ্রণেতাদের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে অনেকের নোবেল জয়ের রেকর্ড রয়েছে।
শেষ মুহূর্তের ঘোষণায় দেখা গেছে, মনোনীত অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের রোমান ক্যাথলিক শাখার ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস, গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের বিরোধীদের গঠিত জাতীয় ঐক্যের সরকার এবং টুভালুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন কোফি আছেন।
প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সাবেক নোবেলজয়ী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ লাখ লাখ মানুষ ভিন্ন ভিন্ন নোবেল পুরস্কারের জন্য পছন্দের প্রার্থীদের মনোনীত করেন। চলতি বছরের নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নের সময় সোমবার শেষ হয়েছে। তবে মনোনীত হওয়া মানেই নোবেল কমিটির অনুমোদন আছে বিষয়টি তেমন নয়।
নরওয়ের আইনপ্রণেতারা ২০১৪ সাল থেকে যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন; তাদের মধ্যে থেকেই প্রায় প্রত্যেক বছরই নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী পাওয়া গেছে। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ২০১৯ সাল ব্যতিক্রম ছিল।
গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন যৌথভাবে দু’জন। তাদের মধ্যে একজন হলেন ফিলিপিনো সাংবাদিক মারিয়া রেসা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নরওয়ের আইনপ্রণেতাদের মনোনয়ন দেয়ার ধরনটি বেশ ঈর্ষান্বিত হওয়ার মতো।
তবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত বিজয়ী কারা হবেন সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন নরওয়ের নোবেল কমিটি; এই মনোনয়নের ব্যাপারে তারা কোনও মন্তব্য করেন না। গত ৫০ বছরে যারা মনোনীত হয়েছেন এবং হতে পারেননি তাদের নাম গোপন রেখে এসেছে এই কমিটি। মনোনীতদের মধ্যে থেকে চূড়ান্ত বিজয়ী বেছে নিতে পারে নোবেল কমিটি।
প্রকৃতি, কোভিড ১৯
‘লাইফ অন আর্থ’ এবং ‘দ্য ব্লু প্ল্যানেট’সহ প্রাকৃতিক বিশ্বকে চিত্রিত করে বানানো বেশ কিছু ঐতিহাসিক টেলিভিশন সিরিজের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ৯৫ বছর বয়সী অ্যাটেনবরো। বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতি মূল্যায়নকারী অলাভজনক সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল সায়েন্স-পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেসের (আইপিবিইএস) সঙ্গে যৌথভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্রিটিশ এই টেলিভিশন উপস্থাপক।
মনোনয়নের প্রস্তাবকারী নরওয়েজিয়ান গ্রিন পার্টির প্রধান উনে বাস্তথলম বলেছেন, পৃথিবীর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে নীতি-নির্ধারকদের জানানো এবং তা রক্ষা করায় তাদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা টেকসই এবং শান্তিপূর্ণ সমাজের পূর্বশর্ত।
পোপ ফ্রান্সিসের বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট সমাধানে সহায়তা প্রচেষ্টার পাশাপাশি শান্তি ও পুনর্মিলনের কাজের জন্য তার নাম মনোনীত করেছেন নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ড্যাগ ইনগে আলস্টেইন।
গত নভেম্বরে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র টুভালুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন কোফে সাগরে দাঁড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা তুলে ধরে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এমন অভিনব উদ্যোগের জন্য নরওয়ের লিবারেল পার্টির গুড়ি মেলবি সাইমন কোফেকে মনোনীত করেছেন।
গত দুই বছর ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে করোনাভাইরাস মহামারি। এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাজে নিযুক্ত জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত বছরের মতো এবারও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে।
অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উর্ডাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, চলতি বছরের পুরস্কারের জন্য কমিটিতে ডব্লিউএইচও নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সেনাবাহিনীর এই অভ্যুত্থানের পর দেশটির বিরোধীদলীয় নেতারা ‘জাতীয় ঐক্যের সরকার’ নামে ছায়া সরকার গঠন করে। মিয়ানমারের এই ঐক্যের সরকারও এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে।
দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক দেয়া বেলারুশের রাজনীতিবিদ সেভেৎলানা টিখানোভস্কায়া বর্তমানে নির্বাসনে রয়েছেন। নিজ দেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য তার ‘সাহসী, বিশ্রামহীন ও শান্তিপূর্ণ কাজের’ জন্য টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন সেভেৎলানা।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোপন মার্কিন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো ও বিতর্কিত ওয়েবসাইট উইলিকস, রাশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা কারাবন্দি অ্যালেক্সি নাভালনি, চেলসি ম্যানিং, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো, আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা কেয়ার, ইরানি মানবাধিকার কর্মী মাসিহ আলীনেজাদ নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনীতদের তালিকায় রয়েছেন।
চলতি বছরে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম আগামী অক্টোবরে ঘোষণা করা হবে। গত বছর ফিলিপিনো সাংবাদিক মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাহসিকতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তারা।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস