ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ভয়াবহ হবে, সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে সেটি ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সেনা জেনারেল মার্ক মিলি। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার এই হামলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হতাহতও ঘটবে।
ইউক্রেন সীমান্তজুড়ে রাশিয়ার এক লাখের বেশি সৈন্য সমাবেশের ঘটনাকে জেনারেল মার্ক মিলি স্নায়ুযুদ্ধের পর সর্বোচ্চসংখ্যক বলে বর্ণনা করেছেন। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, কূটনীতির মাধ্যমে এখনও সংঘাত এড়ানো যেতে পারে।
যদিও রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা অস্বীকার করে বলেছে, ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন হুমকিস্বরূপ। শুক্রবার পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক মিলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের অর্থ হলো একটি সম্ভাব্য আক্রমণ এবং এর পরিণতি হবে গুরুতর।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের এই চেয়ারম্যান বলেছেন, যদি ইউক্রেনে হামলা হয়, তাহলে এটি হবে তাৎপর্যপূর্ণ, খুব তাৎপর্যপূর্ণ। হামলার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হতাহতের ঘটনা ঘটবে।
জেনারেল মিলি বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকায় এর ফল হবে ভয়াবহ, এটা হবে ভয়ানক।
‘অনিবার্য নয়’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য আরও অস্ত্রসহ দেশটিতে সব ধরনের সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেছেন, সংঘাত অনিবার্য নয়। সেখানে এখনও কূটনীতির সময় এবং জায়গা রয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি উত্তেজনা প্রশমনের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
লয়েড বলেছেন, এই পরিস্থিতিকে সংঘর্ষে রূপ দেওয়ার কোনও কারণ নেই... তিনি (পুতিন) সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিতে পারেন।
এর আগে, শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো জোটের শক্তি বৃদ্ধি করতে তিনি ওই অঞ্চলে স্বল্পসংখ্যক সৈন্য পাঠাবেন। তবে এই সৈন্যরা কোথায় সমাবেশ করবেন অথবা কোথায় পৌঁছাবেন সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি তিনি।
গত সপ্তাহে পেন্টাগন জানায়, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সৈন্য সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন; একেবারে সংক্ষিপ্ত নোটিশে মোতায়েনের জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকাতে দেশটির প্রতি চাপ তৈরি করেছে রাশিয়া। এই জোটে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকাতে প্রয়োজনে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঙ্কার দিয়ে সীমান্তজুড়ে এক লাখের বেশি সৈন্য মোতায়েন করলেও রাশিয়া বলছে, এই মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা নেই। যদিও রাশিয়ার ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ উপেক্ষার অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত মাসে পশ্চিমাদের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। এসব দাবির মধ্যে আছে...
• ন্যাটোতে রাশিয়ার যোগদানে বাধা দিতে হবে
• পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক কার্যক্রমের অবসান
• পোল্যান্ডসহ বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া থেকে ন্যাটো জোটের সৈন্য প্রত্যাহার
• রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে, এমন সব দেশে ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না
যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বলছে, পশ্চিমা সামরিক জোটে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন এবং অন্যান্য ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তাহলে এই হামলাই প্রথম হয়ে থাকবে না।
২০১৪ সালে একই ধরনের এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পর ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। এই ঘটনার পর পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন দেয় মস্কো। সেই সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠী ডনবাসের বৃহৎ অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ক্রিমিয়া দখলের সেই সংঘাতে ১৪ হাজারের মতো মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সূত্র: বিবিসি।
এসএস