প্রাণঘাতী হামলার পর ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করল আমিরাত
তেল স্থাপনা এবং প্রধান একটি বিমানবন্দরে ড্রোন হামলায় হতাহতের পর শখের বশে ড্রোন ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত সপ্তাহে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের চালানো ড্রোন হামলায় দুই ভারতীয় ও এক পাকিস্তানির প্রাণহানির পর রোববার আমিরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, সৌখিন ড্রোন উড্ডয়নকারী এবং হালকা বৈদ্যুতিক ক্রীড়া সরঞ্জাম পরিবহনকারী অন্যান্যরা যদি এখন থেকে ড্রোন ওড়ান তাহলে তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তবে ব্যবসায়িক কাজের ভিডিওধারণের জন্য ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
গত সপ্তাহে আবু ধাবিতে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সশস্ত্র ড্রোন হামলায় কয়েকটি জ্বালানি ট্যাংকারে বিস্ফোরণ এবং আবু ধাবির বিমানবন্দরের একটি স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে দুই ভারতীয় এবং এক পাকিস্তানির মৃত্যু এবং আহত হন আরও ৬ জন। আবু ধাবিতে সশস্ত্র এই ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে হুথিরা।
ইয়েমেনের রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ করছে দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথি। গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইয়েমেনের এই বিদ্রোহীরা। ইয়েমেনে লড়াইরত এই জোটের অন্যতম সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতও।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে নিজেদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলেও সৌদি জোটের অন্যতম ক্রীড়ানক হিসাবে দেশটিতে হুথিবিরোধী স্থানীয় মিলিশিয়াদের সমর্থন দিয়ে আসছে আমিরাত।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বলছে, হুথিরা প্রায়ই বোমা-ভর্তি ড্রোন, ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আমিরাতকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আটকে দেওয়ার পর ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটি।
আমিরাতে হামলার জবাবে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট হুথি-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা বৃদ্ধি করেছে।
গত সপ্তাহের ওই হামলার পর আবাসিক এলাকার পাশাপাশি বিমানবন্দরের আশপাশে এবং উপরে ড্রোন ওড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এখন থেকে দেশটির বেসামরিক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সনদ নিয়ে ড্রোন ওড়াতে হবে।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ।
জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।
সূত্র: এএফপি।
এসএস