ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিমান হামলায় নিহত দুই শতাধিক
ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সাদায় সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলায় এখন পর্যন্ত ৩ শিশুসহ দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা রেড ক্রস ইয়েমেন শাখার বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকালের দিকে সাদা প্রদেশের একটি বন্দি শিবিরে হামলা চালায় সৌদি সামরিক জোটের বিমান বাহিনী। ওই শিবিরে ইয়েমেনি বন্দি ছাড়াও বেশ কয়েকজন আফ্রিকান অভিবাসন প্রত্যাশী ছিলেন।
গত কয়েক ইয়েমেনে যুদ্ধ চলা সত্ত্বেও পূর্ব আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে সেখানে যান অভিবাসনপ্রত্যাশীরা, যাদের মূল গন্তব্য থাকে সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সম্পদশালী দেশসমূহ। ধরা পড়লে তাদের ঠাঁই হয় বিভিন্ন বন্দি শিবিরে।
সাদা প্রদেশের ওই বন্দি শিবিরটিতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আফ্রিকান অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। তাদের বেশ কয়েকজনও বিমান হামলায় হতাহত হয়েছেন বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন ইয়েমেন শাখা।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের টেলিভিশন চ্যানেল আল মাসিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিমান হামলায় নিহত ও আহতদের সন্ধানে বন্দি শিবিরের ধ্বংস্তুপে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। আহতদের নিকটস্থ আল জামহুরি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। তবে ঠিক কতজন নিহত হয়েছে- সেই সংখ্যা জানাতে পারেনি আল মাসিরা।
গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অন্যতম অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ড্রোন হামলা করেছিল ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীগোষ্ঠী; তার মাত্র ৪ দিনের মধ্যেই এই হামলা চালাল সৌদি- আমিরাত সামরিক জোট।
সামরিক জোট অবশ্য বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছিল, খুব দ্রুত ইয়েমেনে হামলা চালানো হবে। তবে হামলার পর জোটের কোনো কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি।
গত ৭ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত ইয়েমেনে অস্থিরতার সূত্রপাত হয় ২০১৪ সালে, যখন দেশটির আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে রাজধানী সানা দখল করে নেয় হুথি বিদ্রোহীরা।
হাদির সরকারকে ফের ক্ষমতাসীন করতে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সৌদি-ইয়েমেন-আমিরাত সামরিক জোট।
কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং একদা স্বচ্ছল এই দেশটি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।
সূত্র: এএফপি
এসএমডব্লিউ