পার্টিতে মদ্যপান নিয়ে কেউ আমাকে সতর্ক করেনি: জনসন
লকডাউন চলাকালে নিজের সরকারি বাসভবনে গার্ডেন পার্টি আয়োজন ও বন্ধু-বান্ধবসহ মদ্যপানের অভিযোগে তোপের মুখে থাকা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন- পার্টির আয়োজনের আগে কেউ তাকে সতর্ক করেনি।
যুক্তরাজ্যের সাংবাদকিদের এ সম্পর্কে জনসন বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের বলতে পারি যে, (পার্টির আয়োজনের আগে) কেউ আমাকে সতর্ক করেনি। কেউ বলেনি যে, আমি একটি নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করতে যাচ্ছি। আমার খুব ভালোভাবেই স্মরণে আছে এটা।’
মঙ্গলবার উত্তর লন্ডনের একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বরিস জনসন। সে সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী ডমিনিক কামিংসের সাম্প্রতিক মন্তব্যের জের ধরে তাকে প্রশ্ন করলে এই উত্তর দেন জনসন।
ডাউনিং স্ট্রিটের দুই কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসিকে জানিয়েছেন, ডমিনিক কামিংস যে গার্ডেন পার্টি আয়োজনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেছিলেন- তা তাদের স্মরণে আছে।
দেড় বছর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ওই পার্টি যখন চলছিল, তখন কার্যালয়ের কক্ষে অবস্থান করছিলেন ডমিনিক কামিংস। এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটিকে সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়ে বলছি, আমি তাকে (বরিস জনসন) সতর্ক করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের পার্টি করলে বিপদ হতে পারে; কিন্তু তিনি আমার কথাকে পাত্তাই দেননি।’
২০২০ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যে যখন করোনার প্রথম ঢেউ চলছে, সে সময় বেশ কয়েকজন অতিথির জন্য লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজের সরকারি বাসভবনে পার্টির আয়োজন করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যের প্রথম লকডাউনের মধ্যে আয়োজিত সেই পার্টিতে শতাধিক অতিথি আমন্ত্রিত ছিলেন এবং সবাইকে যার যার মদ আনার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
পার্টিতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ইমেইলের মাধ্যমে। সেই ইমেইলটি সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে এবং তা থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২০ মে আয়োজন করা হয়েছিল সেই গার্ডেন পার্টির।
এদিকে, ইমেইল ফাঁসের পর থেকেই জনসনের পদত্যাগের দাবিতে মুখর হয়ে উঠেছেন বিরোধী দল লেবার পার্টির আইনপ্রণেতারা। বিরোধীদের চাপের মুখে ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে নিজের কৃত ‘ভুলের’ জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি, কিন্তু তাতে পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সের উপনেতা অ্যাঞ্জেলা রায়নার সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। আইন-কানুন প্রণয়ন করা ও তার বাস্তবায়নই তার দায়িত্ব। তাই লকডাউনের সময় গার্ডেন পার্টির আয়োজন নিয়মবিরুদ্ধ এবং এ বিষয়টি তিনি জানেন না- এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
‘বরিস জনসন বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন যে তিনি রাস্তার শেষ মাথায় পৌঁছে গেছেন। এখন তার যদি দেশের আইন ও জনগণের প্রতি কোনো সম্মান, শ্রদ্ধা অবশিষ্ট থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা আশা করব যে তিনি অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন।’
বিরোধী এমপিদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদত্যাগ করবেন কি না- মঙ্গলবার সংবাদিকরা জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট আসার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
এসএমডব্লিউ