নারীদের হিজাব পরার নির্দেশ দিয়ে কাবুলজুড়ে তালিবানের ব্যানার
আফগান নারীদের হিজাব পরার আহ্বান জানিয়ে রাজধানী কাবুলে ব্যানার টানিয়েছে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান। রোববার (৯ জানুয়ারি) দেশটির সৎ কর্মে আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানী কাবুলজুড়ে দেয়াল ও গাছে এই ব্যানার ও প্লাকার্ড টানিয়ে দেয়। সোমবার (১০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আফগান বার্তাসংস্থা খ্যামা প্রেস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের বোরকা ও হিজাব পরতে রাজধানী শহরজুড়ে ব্যানার টাঙানোর পাশাপাশি সমগ্র আফগানিস্তানের গাড়ি চালকদের প্রতিও নতুন নির্দেশনা দিয়েছে তালেবান। এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হিজাব না পরলে কোনো নারীকে গাড়িতে আসন দেওয়া যাবে না।
বার্তাসংস্থা খ্যামা প্রেস বলছে, রোববার (৯ জানুয়ারি) আফগান রাজধানী কাবুলে নারীদের হিজাব পরার আহ্বান সম্বলিত ব্যানার ও প্লাকার্ডগুলো প্রথম দেখা যায়। এই ব্যানারে মেয়েদের বোরকা পরিহিত দু’টি ছবিও দেওয়া হয়েছে। এর একটিতে কালো রংয়ের আবায়া পরিহিত ছবিতে চোখসহ পুরো মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। এবং অন্যটিতে পুরো শরীর বোরকায় ঢেকে রাখার দৃশ্য উঠে এসেছে।
ব্যানারে দেওয়া নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘শরীয়াহ আইন অনুযায়ী, একজন মুসলিম নারীকে অবশ্যই হিজাব পরতে হবে। কারণ এটিই শরীয়াহ আইনের নির্দেশ।’
আফগানিস্তানের সৎ কর্মে আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যানার ও পোস্টার টাঙানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে হিজাব পরতে নারীদের উদ্বুদ্ধ করা। অবশ্য ব্যানারে হিজাবের বিষয়ে সুপারিশ করা হলেও সেটি পরতে নারীদের কেউ বাধ্য করতে পারবে না।
গত বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করে যাচ্ছে তালেবান। গোষ্ঠীটির এসব নিষেধাজ্ঞায় নারীদের অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে।
কাবুলের ক্ষমতা দখলের পরপরই তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেছিলেন, ‘তালেবান আমলে আফগানিস্তানে নারীদের জন্য বোরকা পরা বাধ্যতামূলক নয়। তবে বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের হিজাব পরলেই চলবে।’
পরে গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমে নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন এক তালেবান নেতা। সেসময় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, হিজাব না পরা নারীদের ‘কাটা তরমুজ’-এর মতো দেখা যায়।
তার ভাষায়, ‘আপনারা কি কেউ কাটা তরমুজ ক্রয় করেন? নাকি পুরো একটি তরমুজ কেনেন? অবশ্যই পুরোটাই কেনেন। হিজাব না পরা মেয়েরা হলো ‘কাটা তরমুজ’।’
ক্ষমতা দখলের পর তালেবান অবশ্য আফগান নারীদের পূর্ণ সম্মান দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। এমনকি নারীদের পড়াশোনা এবং কাজের সুযোগও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল গোষ্ঠীটি। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে তালেবানকে ততই পুরনো রূপে ফিরতে দেখা যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তালেবানের প্রথম দফার শাসনামলে আফগান নারীদের জন্য বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। ওইসময় দেশটির নারীদের চাকরি করা নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীরা ভ্রমণে যেতে পারতেন না। ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনা করার অনুমতি ছিল না।
টিএম