কাজাখস্তানে বিক্ষোভ দমনে রাশিয়ার সৈন্য কেন, প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম ও জ্বালানিসম্পদ সমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানের চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রাশিয়ার সেনা সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, কাজাখস্থানে রুশ সেনা মোতায়েনের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় মার্কিন সরকারের কাছে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসের একটি বড় শিক্ষা হচ্ছে- রাশানরা যদি একবার আপনার বাড়িতে ঢোকে, তাহলে তাদের বিদায় করা অনেক সময় খুব মুশকিল হয়ে যায়।’
‘আমরা যতদূর জানি, সম্প্রতি সেখানে যে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে…বিক্ষোভকারীদের অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার মতো সক্ষমতা কাজাখ কর্তৃপক্ষ ও দেশটির সরকারের আছে।’
‘তাই ঠিক কী কারণে কাজাখস্থানের কর্তৃপক্ষ নিজ দেশের সমস্যা সমাধানে বাইরের দেশের সহায়তা চাইল, এটি এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এ কারণে আমরা চেষ্টা করছি এই বিষয়টি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে।’
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি এলপিজি গ্যাসের দাম এক লাফে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দেয় কাজাখস্তানের সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই দিনই মানজিস্তাউ শহরে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ মানুষ।
পরের দিন রোববার (২ জানুয়ারি) থেকে বিক্ষোভ শুরু হয় কাজাখস্তানের প্রধান শহর আলমাতি সহ ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ সহিংস রাজনৈতিক সংঘাতে রূপ নেয়।
সরকার ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের যুদ্ধ শুরু হয় বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি)। কাজাখ পুলিশের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, দেশটির প্রধান শহর আলমাতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি বিভিন্ন দফতর ও পুলিশ স্টেশন দখল করার চেষ্টা চালালে বাধ্য হয়ে গুলি ছুড়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা বন্দুক হামলা শুরু করে।
জনতার রোষ শান্ত করতে ৫ জানুয়ারি দেশটির প্রধানমন্ত্রী আসকার মমিন মন্ত্রিপরিষদসহ পদত্যাগ করেছেন। তারপর জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে দেশজুড়ে, ঘোষণা করা হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ; কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
দাঙ্গা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিতে থাকায় কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও) চুক্তির আওতায় রাশিয়াকে সেনা সহায়তা পাঠাতে অনুরোধ করেন।
কাজাখস্তান ও রাশিয়ার বাইরে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশগুলো হলো বেলারুশ, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও আর্মেনিয়া।
সেই অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রুশ সেনাদের প্রথম দলটি কাজখস্তানে পৌঁছেছে। এই দলে রয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার সেনা সদস্য।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম ও জ্বালানিসম্পদ সমৃদ্ধ এই দেশটিতে গত ৫ দিনের বিক্ষোভে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ২৬ জন হলেন বিক্ষোভকারী, যাদেরকের কাজাখ সরকার অভিহিত করেছে ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী’হিসেবে এবং বাকি ১৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা।
এসএমডব্লিউ