ওমিক্রন: স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করতে সেনা নিয়োগ ব্রিটেনে
করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরনের স্বীকৃতি পাওয়া ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তার জন্য সেনা সদস্যদের নিয়োগ করেছে দেশটির সরকার।
শুক্রবার সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি বলা হয়, ‘এখন থেকে পরবর্তী তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস-যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ) লন্ডন কার্যালয়ে ২০০ সশস্ত্র সেনাসদস্য সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবেন। তাদের একমাত্র কাজ হবে এনএইচএসের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করা।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রকোপে প্রায় ছারখার পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে ইউরোপ। মহাদেশটির অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার দেশটিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৬ জন।
এর আগে ২০২১ সালের শীত মৌসুমে ডেল্টার প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাজ্যে যখন মহামারি ব্যাপক আকার নিয়েছিল, সেসময়ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যদের নিয়োগ করেছিল দেশটির সরকার।
সেই বিষয়টি স্মরণ করে শুক্রবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘মহামারির শুরু থেকেই শীতকালে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই কঠিন সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে আবারও এগিয়ে এল সেনাবাহিনী।’
২০২০ সালে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের যেসব দেশ কোভিডজনিত কারণে সবচেয়ে বিপর্যয়কর সময় পার করছে, সেসবের মধ্যে অন্যতম ব্রিটেন। সরকরি তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে গত দু’ বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৬৫ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৫ জনের।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য সম্প্রতি এক ভাষণে জানিয়েছেন, দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা গেলেও গত বছরের মতো বিপর্যয় এবার দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, দেশের অধিকাংশ মানুষ টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, পাশাপাশি অনেকেই ইতোমধ্যে নিয়েছেন টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ।
‘ফলে, বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার অনেক কম থাকবে, অন্তত গত বছরের তুলনায়’- ভাষণে বলেন বরিস জনসন।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান চান্দ নাগপল দেশটির সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে এ সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সরকার স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করতে সেনা সদস্যদের নিয়োগ করছে- এটি ভালো খবর; কিন্তু সত্য কথা হলো- যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও প্রতিদিন বাড়বে; এবং এক্ষেত্রে আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী সংকট।’
‘আমাদের গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন ভয়াবহভাবে স্বাস্থ্যকর্মী সংকটে ভুগছে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ইতিহাসে এমন সংকট এর আগে আসেনি।’
সূত্র: গালফ নিউজ
এসএমডব্লিউ