নতুন বছরে স্বাভাবিক জীবনের দুয়ার খুলবে, আশা মার্কিনীদের
টেক্সাসের একটি দোকান থেকে কয়েকটি রঙচঙে টুপি, বেলুন ইত্যাদি সামগ্রী কিনেছেন ডানা ফেনার। বছরের শেষ দিন ও নতুন বছরের আগমন উপলক্ষ্যে বাড়িতে ছোটখাটো একটি পার্টির আয়োজন করেছেন, সেজন্যই কেনা হয়েছে এগুলো।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ডানা জানান- তিনি, তার স্বামী, তিন সন্তান ও ঘনিষ্ট কয়েকজন আত্মীয় ও বন্ধুদের উপস্থিতিতে ঘরোয়াভাবে উদযাপন করা হবে ২০২১ সালের শেষ দিন; কিন্তু নতুন বছরে কি আশা করছেন তিনি?
রয়টার্সের এই প্রশ্নের উত্তরে ডানা বলেন, ‘স্বাভাবিক জীবনে ফেরা। আমি চাই, আমরা সবাই যেন ২০২২ সালে মহামারির আগের জীবনে ফিরতে পারি।’
ডানার মতো যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষই চান মহামারির অবসান ঘটুক, ফিরে আসুক স্বাভাবিক জীবন; কিন্তু বর্তমানে মহামারির যে পরিস্থিতি দেশটিতে চলছে, তাতে দ্রুত মহামারির অবসান ঘটবে- এমন কোনো ইঙ্গিত আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না।
২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার ৮২৩ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪৫ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ উৎসব ভালবাসেন। দেশজুড়ে প্রতিবছরই আড়ম্বড়পূর্ণ হয় ইংরেজি নতুন বছর আগমনের উদযাপন। বর্ষবরণের উৎসব সবচেয়ে বড় আকারে হয় নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে।
তবে করোনার থাবায় গতবার এই ধারায় ছেদ পড়েছিল। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে টাইমস স্কয়ার ছিল জনশূণ্য।
চলতি বছর অবশ্য করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্ত সংক্রমণ সত্ত্বেও নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সরকার সীমিত আকারে টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপনের অনুমতি দিয়েছে। সরকারি এক আদেশে বলা হয়েছে, করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন এমন ১৫ শ মানুষ টাইমস স্কয়ারে জড়ো হতে পারবেন।
এদিকে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের অধিকাংশই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আগ্রহী; দেশটির টিকাদান কর্মসূচীর তথ্যে কিন্তু সেই ইঙ্গিত তেমনভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশ করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন।
অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা জনগণের শতকরা হারে এখনও পিছিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউসি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশবাসীকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পানশালা, নৈশক্লাব বা সড়কে বিপুল ভিড়ের মধ্যে নববর্ষ উদযাপন না করে ঘরোয়াভাবে সীমিতসংখ্যক বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে ফাউসি বলেন, ‘আনন্দ-উৎসব করার জন্য ভবিষ্যতে আরও বহু বছর পাওয়া যাবে। এ বছর এসবের প্রয়োজন নেই।’
তবে ঘরোয়াভাবে নববর্ষ উদযাপনকেও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিধ্যালয়ের মহামারিবিদ ক্রিস বেরার। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, পারিবারিক জনসমাগমেও নতুন মাত্রা পেতে পারে সংক্রমণের ঢেউ।
‘তিনটি কারণে আমি কোনো প্রকার জনসমাগমের পক্ষপাতী নই। প্রথম কারণ- শীতে এমনিতেই সংক্রমণের হার বেড়ে যায়, গত বছরও আমরা এমনটা দেখেছি। দ্বিতীয় কারণ- টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা জনগণের নিম্নহার। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি টিকা না নিচ্ছেন, করোনার বিরুদ্ধে তার দেহে ন্যূনতম সুরক্ষাও ততক্ষন পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকে।’
‘আর তৃতীয় কারণ হচ্ছে কম সংখ্যক করোনা টেস্ট। দেশে যে গতিতে করোনা ছড়াচ্ছে সেই তুলনায় টেস্টিং হচ্ছে না। ফলে আপনি আসলে নিশ্চিত হতে পারছেন না যে আপনার বাসায় যিনি এসেছেন, তিনি করোনা নেগেটিভ না কি পজিটিভ।’
এসএমডব্লিউ