সামনের বছর আরও জটিল হবে ‘তাইওয়ান ইস্যু’: সতর্কবার্তা চীনের
তাইওয়ান যদি স্বাধীনতার নামে চীন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে বেইজিং কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন চীনের তাইওয়ান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মা শিয়াওগুয়াং।
আগামী ২০২২ সালে তাইওয়ান ইস্যু আরও জটিল রূপ নিতে পারে বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিয়াওগুয়াং বলেন, ‘যদি তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি তথাকথিত স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে কোনো প্রকার উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নেয় কিংবা রেড লাইন ভাঙার দুঃসাহস দেখায়, সেক্ষেত্রে আমরাও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’
তাইওয়ানকে ঘিরে গত কয়েক বছর ধরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর অবনতি ঘটছে। আনুষ্ঠানিক কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রই তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষক ও অস্ত্র সরবরাহকারী।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বহিরাগত শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে মা শিয়াওগুয়াং বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা খবর অনুযায়ী, বহিরাগত শক্তি সামনের মাসগুলোতে তাইওয়ান ইস্যুতে বেশ কিছু উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।’
‘আমরা বলে দিতে চাই, চীনও চুপচাপ বসে থাকবে না। বহিরাগত শক্তির উদ্দেশ্য আমরা বলতে চাই, যদি তারা তাদের পরিকল্পনা থেকে সরে না আসে, সেক্ষেত্রে সামনের বছর তাইওয়ান ইস্যু আরও জটিল ও ভয়াবহ রূপ নেবে।’
গত ১৫ নভেম্বর ভার্চুয়াল মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দুই দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য, জলবায়ু, জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি, তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে।
এসব ইস্যুর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যু ছিল তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংগ্রাম, যাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা’ বলে উল্লেখ করে আসছে চীন এবং অভিযোগ করে আসছে- যুক্তরাষ্ট্র নানা কৌশলে এই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাকে’ মদত দিচ্ছে।
বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করে বলেন, তাইওয়ানের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাকে’ মদত দেওয়া ‘আগুন নিয়ে খেলা’ করার মতো ব্যপাার এবং এটি অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাত পুড়বে’।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে যে যুক্তরাষ্ট্রের যে চুক্তি রয়েছে, তা-ই মেনে চলতে ইচ্ছুক তার দেশ। তার বাইরে অন্য কোনো কিছুতে জড়ানোর আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
এক সময়ের স্বাধীন রাষ্ট্র তাইওয়ান আসলে পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বদিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। প্রায় ৫ দশক ধরে এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে আসা চীন গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বার বার তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
১৯৪৯ সালে চীনের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকার ও কমিউনিস্টদের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধে জয় হয়েছিল কমিউনিস্টদের। পরাজিত গণতান্ত্রিক সরকারের নেতারা তাইওয়ানে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকেই তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)।
তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি অবশ্য বরাবরই চীনের এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।
এদিকে, চীনের কবল থেকে তাইওয়ানকে রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে ‘কৌশলগত প্রচেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। এ কারণেই তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ‘তাইওয়ান রিলেশন অ্যাক্ট’ নামে একটি চুক্তি অনুসারে দ্বীপটির কাছে অস্ত্র বিক্রিসহ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বজায় রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ