কারাবন্দি সাবেক প্রেসিডেন্টকে যে কারণে ক্ষমা করলো দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতা হারানোর পর আদালতের রায়ে ২২ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। আদালতের সেই রায়ের পর থেকেই কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন সাবেক ওই দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৭ সালে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পার্ক জিউন-হাইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বলপ্রয়োগসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়। সেসব অভিযোগেই ৬৯ বছর বয়সী পার্ক জিউনের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
এছাড়া সেসময় তাকে ১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানাও করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন পার্ক।
বিবিসি বলছে, বন্দি থাকা অবস্থায় চলতি বছর তিন বার পার্ক জিউন-হাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাঁধ এবং পিঠের নিচের অংশে তীব্র ব্যথার কারণেই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম ইয়নহাপ জানিয়েছে, নববর্ষ উপলক্ষে বন্দিদের বিশেষ ক্ষমা ঘোষণা করবেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। বিশেষ ক্ষমার এই তালিকায় পার্ক জিউন-হাইয়ের নামও রয়েছে। মূলত সাবেক এই প্রেসিডেন্টের শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করেই তাকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে পার্ক জিউন-হাইকে ক্ষমার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের এই সিদ্ধান্ত বেশ বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। কারণ স্বাস্থ্যগত কারণে পার্ক জিউনকে ক্ষমার বিষয়টি ইতোপূর্বে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন পার্ক জিউন-হাই। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। পার্ক জিউন-হাইয়ের বন্ধু চোই সুন-সিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নেন।
পার্ক জিউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বন্ধুকে ওই অর্থ পেতে সাহায্য করেছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা পার্ককে অভিশংসিত করার পক্ষে ভোট দেন। এরপর থেকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্বের বাইরে ছিলেন।
এরপর ২০১৭ সালের ১০ মার্চ পার্ক জিউন হাইকে অভিশংসিত করা নিয়ে পার্লামেন্টের নেওয়া সিদ্ধান্তটি বহাল রাখেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত। আর এতেই চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
টিএম