মিয়ানমারে তুমুল সংঘর্ষের মাঝেও শরণার্থীদের ফেরত পাঠাল থাইল্যান্ড
সীমান্তে সেনাবাহিনী ও জাতিগত বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের মাঝে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ৬ শতাধিক শরণার্থীকে ফেরত পাঠিয়েছে থাইল্যান্ড। রোববার থাইল্যান্ডের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আজও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ চলছে।
থাইল্যান্ডের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় তাক প্রদেশে পৌঁছেছেন এমন কয়েকজন শরণার্থী রোববার সকালে সীমান্তে ফিরে যাওয়ার আগে রয়টার্সকে বলেছিলেন, তারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চান। বিকেলের দিকে রয়টার্সের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় টানা গুলিবর্ষণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বিকেলে তাক প্রদেশের গভর্নর সোমচাই কিচারোয়েনরুংগ্রোজ রয়টার্সকে বলেছেন, নিজেদের সম্পত্তি নিয়ে চিন্তিত আরও কিছু শরণার্থী মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠাতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যখন মাঠে নামে, তখন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাণবিনাশী বলপ্রয়োগ করে বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। আর এটা সবাই জানেন। তাই এই শরণার্থীরা প্রকৃত অর্থেই তাদের জীবনের জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বললে তা অতিরঞ্জিত হবে না।
এ ব্যাপারে জানতে রয়টার্স টেলিফোন করলেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার একজন মুখপাত্র কোনো সাড়া দেননি। তবে দেশটিতে বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
থাই-ভিত্তিক মিয়ানমারের অভিবাসী সংস্থা দ্য এইড অ্যালায়েন্স কমিটি বলেছে, থাইল্যান্ডে প্রবেশের অপেক্ষায় মিয়ানমার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় এক হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছেন। রোববার সকালের দিকে রয়টার্সের প্রতিনিধিরা থাইল্যান্ডের স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েক ডজন শরণার্থীকে সীমান্তের ওপারে ফেরত পাঠানোর জন্য তিনটি ট্রাকে করে রাখা হয়েছে বলে দেখেছেন।
সীমান্তের উদ্দেশ্যে ট্রাক ছাড়ার আগে একজন শরণার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি মায়ে তাও তালে শহর থেকে পালিয়েছি। আমার আশপাশের এলাকায় কামানের গোলা পড়েছিল। আমি পানি পার হয়ে এই (থাইল্যান্ড) দিকে হেঁটে এসেছি।’
গভর্নর সোমচাই বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৬২৩ জন শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এখনও ২ হাজার ৯৪ জন শরণার্থী থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। ইচ্ছুক হলে তাদেরও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হটিয়ে দেশটির ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে দেশটিতে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। সীমান্তের দুর্গম কিছু জঙ্গলে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ের জন্য সশস্ত্র প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশটির গণতন্ত্রকামী জনগণ ও কিছু বিদ্রোহীগোষ্ঠী।
দেশটির সবচেয়ে পুরোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) সঙ্গে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সংঘাত শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযানের মুখে হাজার হাজার মানুষ কারেন প্রদেশ থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন। অনেকে নৌকায় করে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের ছোট ছোট নদী পাড়ি দিচ্ছেন। এছাড়া কেউ কেউ বাচ্চাদের দুই হাতে উঁচু করে ধরে বুক সমান পানি পেরিয়ে থাইল্যান্ডের দিকে ছুটছেন।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস