২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতে পাঞ্জাবে আরেকজনকে পিটিয়ে হত্যা
ভারতের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য পাঞ্জাবে শিখধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অবমাননার চেষ্টাকারী এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই এবার শিখদের পতাকা অবমাননার অভিযোগে আরেকজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। রোববার পাঞ্জাবের একটি মন্দিরে দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার এই ঘটনায় সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বলে খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
পাঞ্জাবের কাপুরথালা জেলার নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেছেন, তারা রোববার ভোরের দিকে একটি গুরুদ্বার থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করেছিলেন। ভোর ৪টার দিকে ওই ব্যক্তি শিখধর্মাবলম্বীদের পতাকা ‘নিশান সাহিব’ অবমাননা করেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে জিম্মায় নেয়। এ সময় স্থানীয় শিখ ধর্মাবলম্বীরা ওই ব্যক্তিকে তাদের সামনেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশের কাছে দাবি জানান। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে ওই ব্যক্তি স্থানীয়দের হাতে মারা যান।
এ ঘটনার মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। পরে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়; যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
— DGP Punjab Police (@DGPPunjabPolice) December 19, 2021
এর আগে, শনিবার সন্ধ্যার দিকে অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে শিখধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অবমাননার অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, স্বর্ণ মন্দিরের ভেতরে বিশেষ স্থানে রাখা শিখ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবের সামনে একটি তরবারি আছে। শনিবার সন্ধ্যার দিকে নিয়মিত প্রার্থনার সময় ওই যুবক মন্দিরের ভেতরে রেলিং ধরে লাফিয়ে পড়েন এবং সেই তরবারি ছোঁয়ার চেষ্টা করেন।
পরে মন্দিরে উপস্থিত লোকজন তাকে থামিয়ে দেন এবং বাইরে নিয়ে এসে পিটিয়ে হত্যা করেন। অমৃতসর পুলিশের উপকমিশনার পরমিন্দর সিং ভানদাল বলেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে পূজা অর্চনার সময় এক যুবক বেড়া ডিঙিয়ে মন্দিরের বিশেষভাবে ঘেরা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করেন।
‘মাথায় হলুদ কাপড় বাঁধা ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক সেখানকার বেড়া থেকে লাফিয়ে পড়েন। ভেতরে থাকা লোকজন তাকে আটক করেন এবং করিডরের বাইরে নিয়ে আসেন। সেখানে সহিংস বিবাদ হয় এবং ওই যুবক মারা যান।’
পাঞ্জাব পুলিশের প্রধান এক টুইট বার্তায় বলেন, আমি অমৃতসর এবং কাপুরথালার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুরুত্বসহ নিয়েছি। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি লঙ্ঘনের যে কোনো ধরনের প্রচেষ্টা কঠোর হাতে মোকাবিলা করা হবে। পাঞ্জাবের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বুধবার একই মন্দিরে অন্য একটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি মন্দিরের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘গুটকা সাহিব’ পাশের হ্রদে নিক্ষেপ করছেন।
অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরকে শিখ ধর্মাবলম্বীদের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে মনে করা হয়। গত কয়েক দিনের এসব ঘটনায় সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আগামী বছরের নির্বাচনের আগে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির এই ঘটনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
রাজ্যের রাজনৈতিক দল আকালি দল ইতোমধ্যে এই ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। আকালি দলের এমপি বালউইন্দার ভানদার এনডিটিভিকে বলেছেন, পাঞ্জাবকে দুর্বল করে ফেলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত বছর ধরে কিছু মানুষ এই রাজ্যকে রাজনৈতিক খেলায় পরিণত করেছেন।
এসএস