ফুসফুসের চেয়ে শ্বাসনালীতে দ্রুত বিস্তার করে ওমিক্রন: গবেষণা
সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের নতুন রূপান্তরীত ধরন ওমিক্রনের বংশবিস্তারের হার ফুসফুসের চেয়ে শ্বাসনালীতে অনেক বেশি। সম্প্রতি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে।
ওমিক্রন নিয়ে নিবিড় গবেষণা করছে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে এক গবেষণায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক রূপান্তরিত ধরন ডেল্টার তুলনায় ৭০ গুণ অধিক দ্রুতগতিতে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম।
করোনাভাইরাস নিশ্বাসের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে সংক্রমিত হয়। নতুন কোনো দেহে প্রবেশের পর এই ভাইরাসটি পোষকের শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায় এবং শ্বাসনালী-ফুসফুসসহ পুরো শ্বাসতন্ত্রের টিস্যু-কোষ ক্ষয় করতে করতে দ্রুতহারে বংশবিস্তার করতে থাকে।
পোষকের নিজস্ব প্রতিরোধ শক্তি বা টিকার ফলে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি যদি এই ভাইরাসটিকে পরাজিত ও নিষ্ক্রিয় করতে না পারে, সেক্ষেত্রে পোষকের মৃত্যু হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় হংকংয়ের বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, মূল করোনাভাইরাস ও ডেল্টাসহ তার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর সংক্রমণের সংক্রমণের ধরন প্রায় এক হলেও ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণের ধরনে কিছু ব্যতিক্রমী দিক রয়েছে।
সেসবের মধ্যে প্রধান ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে- মানবদেহে সংক্রমণের পর শ্বাসনালীতে এই ভাইরাসটি যত দ্রুতগতিতে বংশবিস্তার করে, সেই তুলনায় ফুসফুসে এটির বংশবিস্তারের গতি বেশ কম। এমনকি মূল করোনাভাইরাসের তুলনায়ও এই হার ১০ গুণ কম।
তবে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, একটি ভাইরাস ঠিক কতখানি ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা কেবল তার বংশবিস্তারের হার থেকেই নির্ধারণ করা যায় না।
গবেষক দলের প্রধান এবং হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাইকেল চ্যান শিওয়াই বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘একটি ভাইরাস কত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে ও বংশবিস্তার করতে পারে- তা দিয়ে সেই ভাইরাসটির ভয়াবহতা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এটি নির্ধারণের সবচেয়ে আদর্শ উপায় হলো- ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করতে কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ শক্তি কতটা কার্যকর। এ কারণে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
‘এই বিবেচনায় বিবেচনায় অনেক সময় অনেক দুর্বল ভাইরাসও অনেকসময় ভয়াবহ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে; আর ইতোমধ্যে যেহেতু আমরা জানতে পেরেছি ওমিক্রন টিকা নেওয়ার ফলে সৃষ্ট অ্যান্টিবডিকে খানিকটা হলেও ফাঁকি দিতে সক্ষম, তাই সার্বিকভাবে এই ভাইরাসটি যে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ- তা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই।’
গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ববাসীকে প্রথম করোনার রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এক গবেষণায় জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ধরনটির ব্যাপারে বিশ্বকে জানানোর ৫ দিন আগে, নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৬৩টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন। যুক্তরাজ্যে ইতোমধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এসএমডব্লিউ