ওমিক্রন : জরুরি অবস্থা ঘোষণা যুক্তরাজ্যে
ব্যাপক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকা ভাইরাস ওমিক্রনের সংক্রমণে লাগাম টানতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নতুন রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আমরা দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি। ওমিক্রন সংক্রমণের একটি বড় ঢেউ আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে, এই পরিস্থিতিতে কেউই সন্দেহের উর্ধ্বে নয়।’
জনগণকে টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি ইতোমধ্যে পরিষ্কার যে টিকার দুই ডোজ ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে যথাযথ সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু সুসংবাদ হচ্ছে- আমাদের বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসী যে টিকার তৃতীয় ডোজ, কিংবা বুস্টার ডোজ আমাদের সবাইকে এই ধরনটি থেকে কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা দিতে সক্ষম।’
এদিকে, সোমবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। সোমবার যুক্তরাজ্যে এই ধরনটিতে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।
স্কাই নিউজকে সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে করোনা রোগীদের ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। অভূতপূর্ব গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাসটি। প্রতিদিনই এতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বাড়ছে। এত ব্যাপক সংক্রামক ভাইরাস এর আগে আমরা দেখিনি।’
যুক্তরাজ্যে গত ২৭ নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে বরিস জনসন প্রশাসন।
রোববার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশটিতে করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজের কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হবে বলে জানান তিনি। ব্রিটেনে দৈনিক ১০ লাখ মানুষকে করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ববাসীকে প্রথম করোনার রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এক গবেষণায় জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ধরনটির ব্যাপারে বিশ্বকে জানানোর ৫ দিন আগে, নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৬৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন।
গত দুই বছরে করোনা মহামারি বিশ্ব থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ মানুষের প্রাণ, কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনকে করে তুলেছে বিপন্ন, কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি করেছে বিশ্ব অর্থনীতির।
শ্বাসতন্ত্রের এই প্রাণঘাতী রোগে বিশ্বের যে দেশগুলো ভয়াবহ বিপর্যয় পার করছে, সেসবের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাজ্য। ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ৫১৫ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৬ জনের।
বর্তমানে প্রতিদিন দেশটিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রোববার যুক্তরাজ্যে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৮৫৪ জন।
যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়, সেক্ষেত্রে চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
এসএমডব্লিউ