ওমিক্রনে প্রথম মৃত্যু যুক্তরাজ্যে
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে প্রথম প্রাণহানি ঘটেছে যুক্তরাজ্যে। সোমবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই ভ্যারিয়েন্টে দেশটিতে প্রথম একজন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
পশ্চিম লন্ডনের প্যাডিংটনের কাছে একটি টিকাদান ক্লিনিক পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, দুঃখজনকভাবে ওমিক্রনে লোকজন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। দেশে ওমিক্রনে আক্রান্ত কমপক্ষে একজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওমিক্রন করোনাভাইরাসের মৃদু সংস্করণ বলে মানুষের মাঝে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটিকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
‘সুতরাং আমি মনে করি, কোনো না কোনোভাবে ভাইরাসের এই সংস্করণকে মৃদু হিসেবে মনে করার ধারণা আমাদের দূরে সরিয়ে রাখা দরকার। এটি যে গতিতে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে তা স্বীকার করুন।’
যুক্তরাজ্যে গত ২৭ নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে বরিস জনসন প্রশাসন।
রোববার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশটিতে করোনাভাইরাসের বুস্টার ডোজের কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেওয়া চলতি মাসের শেষের দিকে শুরু হবে বলে জানান তিনি। ব্রিটেনে দৈনিক ১০ লাখ মানুষকে করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, দেশটিতে বর্তমানে যারা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ৪০ শতাংশই এই ভাইরাসটির রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।
স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে করোনা রোগীদের ৪০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। অভূতপূর্ব গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভ্যারিয়েন্ট। প্রতিদিনই এতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বাড়ছে। এত ব্যাপক সংক্রামক ভাইরাস এর আগে আমরা দেখিনি।’
‘ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের হার এবং দেশের বর্তমান করোনা চিত্র বলছে, সামনেই একটি করোনা ঢেউ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য এবং খুব দ্রুতই, আবারও আমাদের ‘ভ্যাকসিন বনাম ভাইরাস’ রেসে নামতে হবে।’
সম্প্রতি কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ববাসীকে প্রথম করোনার রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনের তথ্য দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এক গবেষণায় জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ধরনটির ব্যাপারে বিশ্বকে জানানোর ৫ দিন আগে, নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৭টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন।
গত দুই বছরে করোনা মহামারি বিশ্ব থেকে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ মানুষের প্রাণ, কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনকে করে তুলেছে বিপন্ন, কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি করেছে বিশ্ব অর্থনীতির।
শ্বাসতন্ত্রের এই প্রাণঘাতী রোগে বিশ্বের যে দেশগুলো ভয়াবহ বিপর্যয় পার করছে, সেসবের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাজ্য। ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ৫১৫ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৬ জনের।
বর্তমানে প্রতিদিন দেশটিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রোববার যুক্তরাজ্যে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৮৫৪ জন।
যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়, সেক্ষেত্রে চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
এসএস