সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য মিলেছে ওমিক্রনে
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সম্ভবত সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের জন্য দায়ী অপর একটি ভাইরাসের জেনেটিক উপাদানের অংশকে বেছে নিয়ে নিজের জিনগত একটি বিন্যাস ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, আক্রান্ত একই কোষে ঠান্ডা-জ্বরের ভাইরাসের সঙ্গে ওমিক্রনের এই জিনগত বিন্যাস আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
গবেষকরা বলছেন, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের আগের কোনো সংস্করণেই এই জিনগত বিন্যাসের উপস্থিতি ছিল না। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরসহ অন্যান্য অনেক ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়।
ক্যামব্রিজ ম্যাসাচুসেটস-ভিত্তিক ডেটা বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান এনফারেন্সের কর্মকর্তা ভেনকি সৌন্দরাজন বলেছেন, জিনগত বিশেষ এই বিন্যাস ঘটিয়ে ওমিক্রন নিজেকে মানুষের শরীরে প্রবেশের জন্য আরও বেশি উপযোগী করে তুলেছে। যা তাকে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে সহায়তা করেছে।
বৃহস্পতিবার ওএসএফ প্রিপ্রিন্টসের সার্ভারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর অর্থ ভাইরাসটি সম্ভবত আরও সহজে সংক্রমণ ঘটাতে পারে; যা শুধুমাত্র হালকা বা উপসর্গহীন রোগ হয়ে যায়।
তবে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন অত্যধিক সংক্রামক কি না তা এখনো জানাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এছাড়া এটি অত্যন্ত গুরুতর রোগ অথবা ডেল্টাকে ছাড়িয়ে আরও বেশি প্রাধান্য বিস্তারকারী হয়ে উঠতে পারে কি না সেটিও এখনো অজানা। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আরও কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ফুসফুস এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমের কোষগুলো সার্স-কোভ-২ ভাইরাস এবং অন্যান্য সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের ভাইরাসকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আশ্রয় দিতে পারে বলে আগের কিছু গবেষণায় জানা গেছে। এক সঙ্গে একই কোষে এ ধরনের দুই ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে সেখানে তারা নিজেদের একাধিক কপি তৈরি করতে পারে। এছাড়া নতুন ধরনের ভ্যারিয়েন্টের কপিও তৈরি করতে পারে; যেখানে আগের দুই ভাইরাসের জেনেটিক উপাদানও থাকে।
ভেনকি সৌন্দরাজন বলেছেন, নতুন এই রূপান্তর প্রথম দুই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ঘটে থাকতে পারে। যেখানে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস অন্য ভাইরাস থেকে জিনগত বিন্যাসের উপাদান নিজের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নিতে পারে। সৌন্দরাজন ও তার সহকর্মীদের এই গবেষণা এখন পর্যন্ত পিয়ার রিভিউড হয়নি।
তিনি বলেছেন, একই ধরনের জেনেটিক বিন্যাস মানুষের সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের জন্য দায়ী আরেকটি করোনাভাইরাস যা এইচসিওভি-২২৯ই নামে পরিচিত এবং এইডসের জন্য দায়ী হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাসেও (এইচআইভি) দেখা যায় বলে জানিয়েছেন সৌন্দরাজন।
ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকায় এইচআইভি আক্রান্তের হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এইচআইভি আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায় এবং সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর ও অন্যান্য ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস/জেএস