মিয়ানমারে শত শত টেলিকম টাওয়ার উড়িয়ে দিয়েছে বিদ্রোহীরা
মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সমর্থকরা গত ১০ মাসে দেশের ৪০৯ টি টেলিকম টাওয়ার উড়িয়ে দিয়েছে। এসব টাওয়ারের অধিকাংশই জান্তা নিয়ন্ত্রিত মোবাইল কোম্পানি মাইটেলের।
ক্ষমতাসীন জান্তার অন্যতম মুখপাত্র দৈনিক দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসীরা জাতির উন্নয়ন কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এ কারণেই তারা এ ধরনের ক্ষতিকর ও নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে।’ পত্রিকায় আরও বলা হয়, যতগুলো টেলিকম টাওয়ার ধ্বংস হয়েছে তার প্রায় ৮৮ শতাংশই জান্তা মালিকানাধীন মোবাইল কোম্পানি মাইটেলের।
বিদ্রোহীদের সমর্থিত মিয়ানমারের ছায়া সরকারের এক মুখপাত্র রয়টার্সের কাছে স্বীকার করেছেন, জান্তাবিরোধীরা ‘কয়েকটি’ টেলিকম টাওয়ার উড়িয়ে দিয়েছে। তবে তিনি এই দাবিও করেছেন যে, জনগণের সামনে জান্তাবিরোধী শক্তির নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির জন্য বেশিরভাগ টাওয়ার ধ্বংস করেছে ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীই।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে জান্তা মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
নরওয়েভিত্তিক মোবাইল টেলিকম কোম্পানি টেলিনরের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানান, গত দশ মাসে মিয়ানমারে তাদের বেশ কিছু টাওয়ার বিস্ফোরক কিংবা অ্যান্টি পারসোনেল মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক ইমেইল বার্তায় ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব টাওয়ার ধ্বংসের ফলে দেশটিতে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ মোবাইল সেবা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন এনএলডি সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতাসীন হয় সামরিক বাহিনী; বন্দি করা হয় এনএলডির শীর্ষ নেত্রী অং সান সুচিসহ দলের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে।
সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পরপরিই দেশটিতে শুরু হয় গণতান্ত্রিক সরকার পুনর্বহাল ও সু চিসহ সব বন্দির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন। প্রাথমিক পর্যায়ে বিক্ষোভ দমনে লাঠি, রবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করলেও এক পর্যায়ে সেনা সরকারের নির্দেশে প্রাণঘাতী আগ্লেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।
মিয়ানমারের বিভিন্ন বেসরকারি ও মানবাধিকার সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, মিয়ানমারে এ পর্যন্ত সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৩০০’রও বেশি মানুষ। অবশ্য জান্তার দাবি, নিহতের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে বলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এসএমডব্লিউ