নাইজেরিয়ায় অক্টোবরেই পাওয়া যায় ওমিক্রন, পৌঁছেছে ২৪ দেশে
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমনটা বললেও তারও অনেক আগে বিশ্বের কিছু দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির তথ্য সামনে আসছে।
বুধবার নাইজেরিয়া বলেছে, তারা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করেছে গত অক্টোবরে। নাইজেরিয়ায় আসা তিন দর্শনার্থীর নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এর অর্থ, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে বলে জানানো হলেও আসলে এই ভ্যারিয়েন্ট তারও কয়েক সপ্তাহ আগে অন্যান্য দেশে উপস্থিত ছিল।
নাইজেরিয়ার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে নাইজেরিয়ায় ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। সেই সময় নাইজেরিয়ায় আসার পর ওই দর্শনার্থীদের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। আগের নমুনা পুনরায় পরীক্ষায় তিনজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, এই দর্শনার্থীদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি নাইজেরিয়া।
করোনার নতুন এই প্রজাতির বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছেন। এই ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার হওয়ার পর বিশ্বের অন্তত ৭০টি দেশ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ও অঞ্চলের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ওমিক্রন করোনাভাইরাসের বিদ্যমান টিকার সুরক্ষাকে ফাঁকি দিতে পারে অথবা নতুন করে সংক্রমণের ঢেউ শুরু করতে পারে এমন আশঙ্কায় দেশে দেশে সীমান্ত বন্ধের হিড়িক শুরু হয়েছে।
এদিকে, নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ (আরআইভিএম) বলেছে, গত ২৬ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ এবং কেপটাউন থেকে আমস্টারডামের শিফল বিমানবন্দরে আসা দুটি ফ্লাইটের অন্তত ১৪ জন আরোহী করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি বহন করে নিয়ে এসেছেন।
‘কিন্তু আমরা তারও আগে গত ১৯ এবং ২৩ নভেম্বর সংগ্রহ করা দুটি নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। তবে এই দুই ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছিলেন কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়’, আরআইভিএমের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
যেসব দেশে পৌঁঁছে গেছে ওমিক্রন
• দক্ষিণ আফ্রিকা: গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। দেশটির প্রায় সব প্রদেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৭ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
• বতসোয়ানা: আফ্রিকার এই দেশটিতে ১৯ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
• যুক্তরাজ্য: এখন পর্যন্ত ২২ জনের ওমিক্রন সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে।
• জার্মানি: দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মিউনিখ বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের মধ্যে দু’জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। পরে দেশটিতে আরও ৭ জনের এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
• নেদারল্যান্ডস: দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে ১৬ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
• ডেনমার্ক: দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত ৪ জনকে ওমিক্রন আক্রান্ত হিসেবে পাওয়া গেছে।
• বেলজিয়াম: একজনের ওমিক্রন ধরা পড়েছে।
• ইসরায়েল: দেশটিতে ৪ জনের ওমিক্রন নিশ্চিত হওয়া গেছে।
• ইতালি: দেশটিতে ৯ জনকে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
• চেক প্রজাতন্ত্র: স্থানীয় গণমাধ্যমে একজনকে ওমিক্রন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের তথ্য জানানো হয়েছে।
• হংকং: ওমিক্রন আক্রান্ত ৪ জন শনাক্ত হয়েছে।
• অস্ট্রেলিয়া: দেশটিতে ৭ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
• কানাডা: দেশটিতে ৬ জনের এই ধরন শনাক্ত হয়েছে।
• অস্ট্রিয়া: দেশটির টাইরোলে দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত একজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। আরও ৩০ জনকে এই ধরনে আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করছে কর্তৃপক্ষ।
• সুইজারল্যান্ড: প্রায় এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা একজনের ওমিক্রন ধরা পড়েছে।
• ফ্রান্স: একজনকে এই ধরনে আক্রান্ত হিসেবে পাওয়া গেছে।
• পর্তুগাল: ১৩ জনের শরীরে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে।
• ব্রাজিল: দেশটিতে দুজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
• জাপান: দু’জনকে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হিসেবে পাওয়া গেছে।
• নাইজেরিয়া: বুধবার দেশটি তিনজনের ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।
• নরওয়ে: নরওয়েতে দুজনের ওমিক্রন ধরা পড়েছে।
• সৌদি আরব: মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বুধবার প্রথম সৌদি আরবে একজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
• স্পেন: দেশটিতে দুজনকে এই ধরনে আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
• সুইডেন: তিনজনের ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। একই সঙ্গে ওমিক্রনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সংস্থাটি।
কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়ার ৫ দিন আগের নমুনায় নেদারল্যান্ডসে ‘ওমিক্রন’ সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে বলে মঙ্গলবার আরআইভিএম জানিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের এই স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ওই দুই ব্যক্তির নমুনায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর লোকজনকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং পৌর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এখন কন্টাক্ট ট্রেসিং শুরু করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এক সপ্তাহ আগে শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের ধনী দেশগুলোর ব্যাপক টিকাদান এবং দরিদ্র দেশগুলোতে ব্যাপক বৈষম্যের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। যে কারণে নতুন প্রজাতির এই ধরনের বিস্তার রোধের প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মহামারি বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকি’ তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। পাশাপাশি ভাইরাসের এই ধরনকে মোকাবিলায় বিশ্বকে দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা।
সূত্র: এএফপি, ব্লুমবার্গ, সিএনএন, রয়টার্স।
এসএস