ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের মালিক হতে দেবে না যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল
ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের মালিক হওয়া রুখতে একসঙ্গে ‘দিন-রাত কাজ করবে’ ব্রিটেন এবং ইসরায়েল। যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদপত্রে লেখা একটি যৌথ নিবন্ধে এই কথা জানিয়েছেন উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার (২৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লিপিদের লেখা যৌথ ওই প্রবন্ধ রোববার প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদপত্র টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ ও ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সময় এগিয়ে যাচ্ছে এবং (পরমাণু অস্ত্রের মালিক হওয়ার মতো) তেরানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ করে দিতে আমাদের অংশীদার ও মিত্রদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাও জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এদিকে বহুল আলোচিত পরমাণু চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সোমবার থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পুনরায় আলোচনায় বসছে ইরান এবং বিশ্বের ৬ পরাশক্তি। পাঁচ মাস পর পুনরায় শুরু হতে যাওয়া ওই বৈঠকে পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় ফিরে আসাসহ ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
আর এই বিষয়েই নিজের উদ্বেগ আগেই জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। দিন দু’য়েক আগে তিনি জানিয়েছেন, পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিশ্ব শক্তিসমূহ ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে তিনি ‘খুবই চিন্তিত’।
এদিকে টেলিগ্রাফের ওই প্রবন্ধে আরও জানানো হয়েছে যে, বিভিন্নখাতে সহযোগিতামূলক একটি ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে ব্রিটেন ও ইসরায়েল। এই চুক্তির আওতায় সাইবার নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষাখাতে একে অপরকে সহযোগিতা করবে উভয় দেশ। সোমবারই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এর ফলে পামাণবিক বোমা প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম মজুতের ক্ষেত্রে রাশ টানতে বাধ্য হয় রুহানির প্রশাসন। এছাড়া ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে, সে দিকেও নজর রাখে জাতিসংঘ।
কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল টানাপোড়েন শুরু হয়। এমনকি রাশিয়া থেকে সাহায্য পাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় দেশটির।
চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে ওয়াশিংটন ফের এই চুক্তিতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শাসনামলে ৬ বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের কয়েক দফা আলোচনা হয়।
গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এসব ধারাবাহিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে এরপর জুনে অনুষ্ঠিত ইরানের নির্বাচনে ইব্রাহিম রাইসি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই সংলাপ এতদিন বন্ধ ছিল। তবে সোমবার থেকে ফের তা শুরু হচ্ছে।
টিএম