চীনে করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে জিরো টলারেন্স নীতি থেকে সরে গেলে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিনে ৬ লাখ ৩০ হাজারের বেশি হতে পারে। দেশটির পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদদের নতুন এক গবেষণায় এই শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের সাপ্তাহিক এক প্রতিবেদনে ওই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অধিক কার্যকর টিকা এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা ছাড়া ভ্রমণ বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার মাশুল চীন বহন করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, স্পেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েলের গত আগস্ট মাসের করোনাভাইরাস মহামারির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চীনের গণিতবিদরা ওই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তারা ওই দেশগুলোর মতো মহামারি নিয়ন্ত্রণ কৌশল চীন গ্রহণ করলে সেটির সম্ভাব্য রূপরেখা কেমন হতে পারে সেটি তুলে ধরেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি কৌশল অবলম্বন করলে চীনের দৈনিক নতুন সংক্রমণ কমপক্ষে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৫৫ জনে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া ব্রিটেনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে চীনে এই আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯৩ এবং ফ্রান্সের মতো কৌশল অবলম্বন করা হলে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৮ জন হতে পারে।
‘এসব পূর্বানুমান বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের প্রকৃত সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরেছে; যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর একটি অসহনীয় বোঝা সৃষ্টি করবে।’
গবেষকরা বলছেন, তাদের এই অনুসন্ধান একটি পরিষ্কার সতর্কবার্তা দিয়েছে। সেটি হলো পশ্চিমাদের মতো চীন এখনও পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কৌশল নিতে নিতে প্রস্তুত নয়।
তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চীনের ব্যাপারে করোনাভাইরাসের এই অনুমান একেবারে মৌলিক গাণিতিক হিসেব-নিকেশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে মহামারির বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার জন্য আরও গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের মূল্যায়ন প্রয়োজন।
চীন কোভিড-১৯ এর জিরো টলারেন্স নীতি জারি রেখেছে। দেশটির সরকার বলেছে, স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের লাগাম টানায় গুরুত্বারোপ করছে। একই সঙ্গে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর কন্টাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন এবং সংক্রমিতদের চিকিৎসায় জোর দিচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
রোববার চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় নতুন করে ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন; যা আগের দিনের ২৫ জনের তুলনায় কিছুটা কম।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন বি.১.১৫২৯ শনাক্ত হয়েছে। পরে গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে যার নাম দেওয়া হয় ওমিক্রন। ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, ইসরায়েল, হংকং, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাজ্যেও পাওয়া গেছে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান।
যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইক প্রোটিন মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে, মূল করোনাভাইরাস থেকে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি; এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস