সম্পত্তি নিয়ে হিন্দুজা পরিবারে বিবাদ, ভাঙছে ১০৭ বছরের যৌথ ব্যবসা
বিশ্বের শীর্ষ ধনী শিল্পগ্রুপদের মধ্যে অন্যতম হিন্দুজা গ্রুপ। অটোমোবাইল, কেমিক্যালস, ব্যাংকিংসহ ১১ খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের। গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ কোটি ডলার (প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকা)।
সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চার ভাই, শ্রীচাঁদ, গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোক। হিন্দুজা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বছর খানেক আগেই আদালতে আবেদন জানিয়েছেন বড় ভাই শ্রীচাঁদ।
প্রয়াত পরমানন্দ হিন্দুজা প্রতিষ্ঠিত হিন্দুজা শিল্পগোষ্ঠীর বয়স ১০৭ বছর। পরমানন্দের প্রয়াণের পর থেকে যৌথভাবেই পারিবারিক ব্যবসা চালিয়েছেন চার ভাই। গাড়ি, ব্যাংকিং, গ্যাস, তেল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩৮টি দেশজুড়ে ছড়ানো হিন্দুজাদের ব্যবসা। প্রতি বছর ‘নিয়ম করে’ ব্রিটেনের সেরা ধনীদের তালিকায় ঠাঁই পান হিন্দুজা ভাইয়েরা। কিন্তু সুখের সেই সংসারেই এখন ঘনিয়েছে অশান্তির মেঘ।
৮৫ বছরের শ্রীচাঁদ এখন গুরুতর অসুস্থ। স্মৃতিভ্রংশ রোগেও ভুগছেন। তার হয়ে আইনি লড়াইয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দুই মেয়ে বিনু এবং শানু। শানুর ছেলে করমই বকলমে দাদুর তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা তদারকি করছেন।
সম্প্রতি জেনেভায় একটি সাক্ষাৎকারে করম বলেন, ‘দাদু বলতেন, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হলে সপ্তাহে এক বার সদস্যদের একত্রিত হয়ে সিনেমা দেখা উচিত। আমরা সে রকমই করতাম। সকলে একত্রিত হয়ে সবকিছু ভালো-খারাপ ভাগ করে নিতাম।’
কিন্তু এ ভাবে কয়েক দশক ধরে পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকলেও এ বার হিন্দুজা সাম্রাজ্যের ভাগাভাগি অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলেও স্বীকার করে নেন তিনি।
২০১৪ সালের একটি যৌথ ঘোষণাপত্র ঘিরেই হিন্দুজা পরিবারে বিবাদের সূচনা। চার হিন্দুজা ভাইয়ের সই করা ওই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, কোনো এক ভাইয়ের হাতে থাকা সম্পত্তি আদতে চার ভাইয়েরই। যে কোনো ভাই অন্য ভাইদের নিয়োগ করতে পারবেন সেই সম্পত্তির তদারকিতে। কিন্তু শ্রীচাঁদ এবং তার কন্যাদের দাবি, ওই যৌথ ঘোষণাপত্রের কোনো আইনি বৈধতা নেই। তাই শ্রীচাঁদের নামে থাকা ব্রিটেন এবং সুইজারল্যান্ডের হিন্দুজা ব্যাংক তার নিজস্ব সম্পত্তি। গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোক সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তারা এখনও ‘অখণ্ড হিন্দুজা সাম্রাজ্যের’ তত্ত্বেই অনড় রয়েছেন।
ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের পারিবারিক ব্যবসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কে রামচন্দ্রন মনে করেন শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষে পুরনো নীতি বজায় রাখা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ‘গোপীচাঁদ, প্রকাশ এবং অশোকের সমাজতান্ত্রিক ভাবনা বাস্তবায়িত করা এখন খুবই কঠিন।’
সূত্র : আনন্দবাজার
এসকেডি