বিশেষ কোনো ওষুধ ছাড়াই এইডস থেকে মুক্তি কানাডীয় নারীর
প্রাণঘাতী অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম (এইডস) রোগে আক্রান্ত এক নারীর দেহে এ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে, এইডস থেকে বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ তিনি। অভূতপূর্ব এই ঘটনাটি ঘটেছে কানাডায়।
৩০ বছর বয়সী ওই নারী বর্তমানে কানাডায় বসবাস করলেও তার আদি নিবাস আর্জেন্টিনায়। সেখান থেকে ২০১৩ সালে কানাডায় এসে বসবাস শুরু করেন তিনি।
চিকিৎসা ও এ বিষয়ক গবেষণাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাময়িকী ইনটার্নাল মেডিসিনে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য। সেই সাময়িকীর বরাত দিয়ে মঙ্গলবার প্রতিবেদন করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
এইডসের চিকিৎসা ও এ বিষয়ক গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে কানাডার এই নারীই একমাত্র এইডসরোগী, যিনি নিজ দেহে এই রোগ সৃষ্টিকারী হিউম্যান ইমিউনো ভাইরাসকে (এইচআইভি) নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
ইনটার্নাল মেডিসিনের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই নারীর আগ পর্যন্ত বিশ্বের ইতিহাসে মাত্র দুইজন এইডস রোগীর দেহে এইচআইভি নিষ্ক্রিয় বা ‘নেগেটিভ’ হওয়ার তথ্য রয়েছে। তবে ওই দু’জনের উভয়েই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন এবং এই রোগের চিকিৎসাকালে এক পর্যায়ে তাদের দেহে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়।
কিন্তু কানাডার এই নারী কোনো বিশেষ চিকিৎসা নিয়েছেন- এমন কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। দেশটির অন্যান্য রোগীদের মতই কম্বাইন্ড মেডিসিন থেরাপির দেওয়া হচ্ছিল তাকে।
ইনটার্নাল মেডিসিনের এ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন’স র্যাগন ইনস্টিটিউটের গবেষক জু ইউ এবং আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেসের ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল রিসার্চ ইন রেট্রোভাইরাস অ্যান্ড এইডসের গবেষক নাতালিয়া লৌফেরের নামে।
প্রতিবেদনে এই দুই গবেষক ওই নারীর নাম প্রকাশ করেননি, পরিবর্তে তাকে উল্লেখ করেছেন ‘এলিট কন্ট্রোলার’ হিসেবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে জু ইউ ও নাতালিয়া রৌসেফ বলেন, ‘আমরা এলিট কন্ট্রোলারের রক্ত ও টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি। কোনো বিশেষ রাসায়নিক বা ওষুধের অস্তিত্ব পাইনি। এ থেকে নিঃসন্দেহে এটি বলা যায়, প্রাকৃতিকভাবেই তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে।’
‘মানবদেহে এইডসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার ইতিহাস থেকে এ পর্যন্ত ওই নারীই একমাত্র এইডসরোগী, যিনি প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এইডস রোগের চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণায় এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর মধ্যে দিয়ে এইডসকে পরাস্ত করতে বিজ্ঞানীদের সামনে একটি নতুন পথ তৈরি হলো।’
ওই নারীর ডিএনএ বিশ্লেষণ করে আরও জানা গেছে, শ্বেতাঙ্গ বা ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীভুক্তদের এক শতাংশ এইচআইভির সংক্রমণ থেকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা ভোগ করেন।
এইডস আসলে একই সঙ্গে রোগ এবং রোগলক্ষণসমষ্টি। এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করতে পারলে সেটি মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রতিরক্ষাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে, একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।
গত শতকের ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরই দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এইচআইভিও শনাক্ত করে।
অনিরাপদ যৌনতা, সিরিঞ্জের সূঁচের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে এইচআইভি ভাইরাস। এছাড়া, মায়ের মাধ্যমেও এইডসে আক্রান্ত হয় শিশুরা। কোনো গর্ভবতী নারীর দেহে এইডসের জীবাণু থাকলে তা অনাগত সন্তানকেও সংক্রমিত করে।
সাহারা ও নিম্ন আফ্রিকার অঞ্চলগুলোতে এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যান এইডসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ১০ লাখ মানুষ।
এসএমডব্লিউ