কাপড় খুলে তল্লাশি, কাতারের বিরুদ্ধে মামলা অস্ট্রেলীয় নারীদের
এক বছরেরও বেশি সময় আগে কাতারের রাজধানী দোহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাপড় খুলে তল্লাশির অভিযোগে কাতারের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ১৩ জন নারী। খবর বিবিসি অনলাইনের।
২০২০ সালের ২ অক্টোবর কাতারের দোহা বিমানবন্দরের একটি আবর্জনার বিনে প্লাস্টিকে মোড়ানো এক নবজাতক উদ্ধার হয়। কাতারের রাষ্ট্রীয় বিমান পরিষেবা সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজে আসা কোনো নারী যাত্রী জন্ম দেওয়ার পর শিশুটিকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন- এমন সন্দেহ হয় দোহার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
সন্দেহ নিরসনে শারীরিক পরীক্ষার জন্য কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানের ১৮ জন নারী যাত্রীকে উড়োজাহাজ থেকে নামতে বাধ্য করা হয়। তাদের মধ্যে ২ জন ছিলেন ব্রিটিশ, বাকিরা সবাই অস্ট্রেলীয় নাগরিক।
তারপর ওই নারী যাত্রীদের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বিমানবন্দরের এক পাশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নার্সের তত্ত্বাবধানে খোলা পরিবেশে তাদের কাপড় খুলে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।
কিন্তু সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় পরীক্ষা শেষে ছেড়ে ফের তাদের বিমানে নিয়ে আসা হয়। ৫ মিনিট ধরে চলেছিল সেই পরীক্ষা।
নিজেদের দেশে ফেরার পর ওই নারীরা অভিযোগ করেন, তল্লাশি বা শারীরিক পরীক্ষার আগে তাদেরকে ঘটনার ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি এবং সম্মতি না নিয়ে জোর করে তাদের সঙ্গে এই আচরণ করা হয়েছে।
যখন তাদরকে পরীক্ষা করা হচ্ছিল, তখন আশেপাশে সশস্ত্র বিমানবন্দর রক্ষীবাহিনী ছিল উল্লেখ করে এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘যখন আমাকে পরীক্ষা করা হচ্ছিল, আমার শঙ্কা ছিল- আজ হয় আমাকে এই রক্ষীদের কারোর গুলিতে মরতে হবে, নয়তো তারা বিমানে অপেক্ষারত আমার স্বামীকে হত্যা করবে।’
এদিকে, নারীদের অভিযোগের জেরে কাতারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। শুরু হয় কাতারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ। অস্ট্রেলিয়ার সরকারও এ ঘটনায় কাতার সরকারের প্রতি কঠোর ভাষায় নিন্দা জানান।
পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিতে থাকায় তা সামাল দিতে অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছে ক্ষমা চান কাতারের প্রধানমন্ত্রী খালিদ বিন খলিফা বিন আবদুলআজিজ আল থানি। পাশাপাশি তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, এই হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে এ ঘটনায় বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি তাকে কারাগারেও পাঠিয়েছে কাতারের সরকার।
কিন্তু তারপরও কেন মামলা করলেন এই নারীরা?- বিবিসির এ প্রশ্নের উত্তরে তাদের আইনজীবী ড্যামিয়েন স্টারজাকার বলেন, ‘কাতারের সরকার অস্ট্রেলীয় সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়েছে- এটি অবশ্যই ভালো। তবে আমার মক্কেলরা জানিয়েছেন, তারা যখন কাতার সরকারের কাছে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন,(কাতার) সরকার কোনো উত্তর দেয়নি।
‘তারা চাইছেন, কাতারের সরকার যেন এ ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে ক্ষমা চায় এবং প্রতিশ্রুতি দেয়- ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ঘটনা আর ঘটবে না।’
এসএমডব্লিউ