কপ ২৬ : চুক্তির খসড়ায় জলবায়ু রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপের দাবি
জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ ২৬’ বৈঠকের শেষ দিন সম্মেলনের খসড়া চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঠেকাতে সম্মেলনে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রসমূহ কী কী পদক্ষেপ নেবে, তা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অধিকতর দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার সামনে প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে কপ ২৬ সম্মেলনের চুক্তির খসড়ায়।
পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোকে প্রাপ্য তহবিল সরবরাহে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে, বিশ্বজুড়ে কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার রোধে যে কঠোর নীতিমালা এই সম্মেলন থেকে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা অনেকাংশেই অপূর্ণ থেকে গেছে বলে জানা গেছে বিবিসির প্রতিবেদন থেকে।
অবশ্য এমন যে ঘটবে, তা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সম্মেলনের খসড়া চুক্তি লেখার আগেই শুক্রবার এক বার্তায় গুতেরেস বলেছিলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে- কপ ২৬ তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার যে দাবি উঠেছে, তা মুমূর্ষু অবস্থায় পৌঁছাবে।’
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইউরোপে ঘটে শিল্প বিপ্লব। আগে যেখানে কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তাকে হটিয়ে জায়গা করে নেয় জীবাশ্ম জ্বালানিতে পরিচালিত বড় বড় কারখানা। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের একশ বছরের মধ্যে গোটা বিশ্বেই শুরু হয় কারখানাভিত্তিক উৎপাদন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের পরিবেশবিদরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন- শিল্পোৎপাদনের ফলে বিশ্বজুড়ে বর্ধিত তাপমাত্রা যদি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে ফেলা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে।
তারা আরও বলেছেন, তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধি পায়, বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
পরিবেশবিদদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের তাপমাত্রা শিল্প বিপ্লবপূর্ব সময়ের তুলনায় ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
যা আছে খসড়া চুক্তিতে
* কপ ২৬ সম্মেলনের খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
* সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শতাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বনাঞ্চল ধ্বংস করা বন্ধে তারা কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এবং আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের বনাঞ্চলের পরিধি বাড়াবেন।
* ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস মিথেনের নিঃসরণ রোধে একসঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।
* বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশ ইতোমধ্যে এই শর্তে স্বাক্ষর করেছে যে, তারা বিদ্যুৎ ও শিল্পোৎপাদনে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসবে। অবশ্য বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই শর্তে স্বাক্ষর করেনি।
* জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দুর্যোগ মোকাবিলয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেওয়া সহায়তার অর্থ বাড়ানো হবে।
* জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে একসময় তা একেবারে বন্ধ করার জন্য একটি নতুন জোট গঠিত হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে- অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের কোথাও খনিজ তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হবে না।
এসএমডব্লিউ/জেএস