কমলালেবু বিক্রেতার পদ্ম শ্রী জয়ের গল্প
হারেকালা হাজাব্বা। পেশায় কমলালেবু বিক্রেতা। কখনও সড়কে, কখনও বাস স্টান্ডে কমলালেবু ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে বসবাস করেন। ২০২০ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্ম শ্রী পদক পেয়েছেন এই কমলালেবু বিক্রেতা।
সোমবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে এই সম্মাননা নিয়েছেন হারেকালা। তার পদ্ম শ্রী জয়ের গল্প দেশটির নাগরিকদের মন জয় করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ম্যাঙ্গালুরুর হারেকালা-নিউপাদু গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর জন্য ভারত সরকার ৬৬ বছর বয়সী এই কমলালেবু বিক্রেতাকে পদ্ম শ্রী পদকে ভূষিত করেছে। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত ১৭৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
১৯৭৭ সাল থেকে ম্যাঙ্গালুরুর বাস ডিপোতে কমলালেবু বিক্রি করেন হাজাব্বা। নিরক্ষর এই কমলালেবু বিক্রেতা কখনও স্কুলে যাননি।
১৯৭৮ সালে একজন বিদেশি পর্যটক ম্যাঙ্গালুরু বাস ডিপোতে হাজাব্বার কাছে কমলালেবুর দাম জানতে চেয়েছিলেন। ইংরেজি বুঝতে না পারায় সঠিকভাবে তার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেননি হাজাব্বা। এরপর অনুশোচনা থেকে নিজ গ্রামে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটানোর আকাঙ্ক্ষা জেঁকে বসে হাজাব্বার মনে।
পদ্ম শ্রী জয়ী এই কমলালেবু বিক্রেতা দেশটির সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘ওই বিদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় আমার খারাপ লেগেছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবো।’
‘আমি শুধুমাত্র কান্নাদা ভাষাই জানতাম, ইংরেজি কিংবা হিন্দি কিছুই জানতাম না। বিদেশিকে সাহায্য করতে না পারায় বিষণ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমার গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছিলাম,’ যোগ করেন তিনি।
ওই ঘটনার দুই দশক পর তার এই স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়। জনহিতকর কাজ করায় ‘অক্ষর সান্তা’ খেতাব পেয়েছিলেন তিনি। পরে রাজ্যের প্রয়াত বিধায়ক ইউটি ফরিদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন হাজাব্বা। ২০০০ সালে এই স্কুলের অনুমোদন দিয়েছিলেন বিধায়ক ফরিদ।
হাজাব্বার প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল মাত্র ২৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে সেখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৭৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন কমলালেবু বিক্রেতা হাজাব্বা। সর্বশেষ পদ্ম শ্রীসহ অন্যান্য পুরস্কারের সব অর্থ গ্রামে আরও স্কুল প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করতে চান তিনি।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, জানতে চাইলে ৬৬ বছর বয়সী হাজাব্বা বলেন, ‘এখন আমার গ্রামে আরও বেশি স্কুল এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা করাই আমার লক্ষ্য। অনেক মানুষ অর্থ দান করছেন। স্কুল এবং কলেজ নির্মাণের জন্য জমি কিনতে আমিও পুরস্কারের অর্থ জমিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমার গ্রামে প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য) নির্মাণের অনুরোধ করেছি।’
গত বছরের জানুয়ারিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পদ্ম জয়ীদের নাম ঘোষণা করে। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রটোকলের কারণে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত হয়ে যায়। সোমবার দিল্লিতে ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ পদ্ম জয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন।
এসএস