বিশ্ব উত্তপ্তকারী মিথেনের লাগাম টানতে প্রায় ৯০ দেশের অঙ্গীকার
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেনের নির্গমন চলতি বছরের স্তরের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতৃত্বাধীন এক চুক্তিতে যোগ দিয়েছে বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান উপাদান মিথেনের নির্গমন হ্রাসই মার্কিন-ইইউ নেতৃত্বাধীন এই চুক্তির লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার জলবায়ু সম্মেলনে ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। কার্বন ডাইঅক্সাইডের পর মিথেনই পরিবেশ বিপর্যয়কারী অন্যতম প্রধান উপাদান। কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় বায়ুমণ্ডলের তাপ শোষণকারী আস্তরণকে দ্রুত গলিয়ে ফেলতে সক্ষম মিথেন। যে কারণে এই গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাসই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির লাগাম দ্রুত টেনে ধরতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ব নেতারা।
বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তার মতে, ‘দ্য গ্লোবাল মিথেন প্লেজ’ নামের এই চুক্তির ব্যাপারে গত সেপ্টেম্বরে প্রথম ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ শক্তি অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ৩০ মিথেন নির্গমনকারী দেশের অর্ধেক এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নতুন যারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, তাদের নাম মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ মিথেন নির্মগনকারী দেশের অন্যতম ব্রাজিলও এই চুক্তিতে আছে। তবে মিথেন নির্গমনকারী শীর্ষ পাঁচ দেশের অন্তর্ভুক্ত চীন, রাশিয়া এবং ভারত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েকটি দেশের স্বাক্ষরের পর প্রথম এই চুক্তির ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিশ্বের সর্বাধিক মিথেন নির্গমনকারী দেশগুলোকে এই অংশীদারিত্বে যোগদান নিশ্চিতে কাজ করেছে।
কপ২৬ সম্মেলনের আগে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন চূড়ান্ত কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও গত সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র ৬০টি দেশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। আরও ৩০টি দেশের যোগদান করছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ।
এই চুক্তির বিষয়টি জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক আলোচনার কোনও বিষয় নয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাব মোকাবিলায় ‘মিথেন প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক এই চুক্তি এবারের কপ২৬ সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফলাফলের মধ্যে স্থান পেতে পারে।
গত মে মাসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি দশকে মিথেনের নির্গমন অত্যধিক পরিমাণে হ্রাস করা গেলে তা ২০৪০ এর দশকের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রায় শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এড়াতে সহায়তা করতে পারে।
তবে মিথেন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
এই চুক্তির ফলে স্বাক্ষরকারীরা যৌথভাবে মিথেনের বৈশ্বিক নির্গমন ৩০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। তাদের এই অর্জন সব খাতের ওপর প্রভাব ফেলবে। মিথেন নির্গমনের অন্যতম প্রধান উত্সগুলোর মধ্যে রয়েছে তেল ও গ্যাস অবকাঠামো, পুরোনো কয়লা খনি এবং ময়লার ভাগাড়।
চুক্তির প্রতিশ্রুতি যদি পূরণ করা হয়, তাহলে এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক জ্বালানি খাতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মিথেন নির্গমন রোধ করার দ্রুত ও সহজতম উপায় হলো তেল এবং গ্যাসের ফুটো হয়ে যাওয়া অবকাঠামো ঠিক করা।
বিশ্বের বৃহত্তম তেল এবং গ্যাসের উৎপাদনকারী যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, গ্যাসের বৃহত্তম আমদানিকারক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সপ্তাহে তেল, গ্যাস এবং মিথেনের প্রস্তাবনা প্রকাশ করবে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস