জামাই বাবা হতে পারবেন কিনা পরীক্ষা করলেন শ্বশুর
বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর নানা বিষয় মিলিয়ে নেওয়ার রীতি বহু পরিবারই মেনে চলে। অনেকে আবার হবু জামাইয়ের জীবনাচরণ এবং আর্থিক উপার্জন সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। ইদানীং অনেকে থ্যালাসেমিয়া টেস্টও করিয়ে নিচ্ছেন।
এ পর্যন্ত তো ঠিক আছে, তবে হবু জামাই সন্তানের পিতা হতে সমর্থ কি না বা সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম কি না তা নিয়ে সম্ভবত বহু মেয়ের মা-বাবার কৌতূহল নেই। তবে সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে মেয়ের বিয়ে দিতে বাবা-মা তাদের হবু জামাইয়ের বীর্য পরীক্ষা করিয়েছেন বলে দাবি করেছেন এক চিকিৎসক।
মূলত মেয়ের সঙ্গে বিয়ের পর পাত্র বাবা হতে পারবেন কি না, তা জানতেই হবু জামাইয়ের বীর্যের রিপোর্ট দেখতে চাইলেন হবু শ্বশুর। দেশে বা বিদেশে অতীতে এমন ঘটনার কোনো নজির না থাকলেও প্রতিবেশী দেশের কলকাতা সাক্ষী থাকল এমন ঘটনার।
সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইন্দ্রনীল সাহা এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে এনেছেন। যেখানে তিনি জানিয়েছেন, এক যুবক সম্প্রতি তার কাছে এসে ‘স্পার্ম কাউন্ট’ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। যুবকের অনুরোধ ছিল, ‘প্লিজ টেস্টটা করে দিন। আমার হবু শ্বশুর রিপোর্ট দেখতে চেয়েছেন।’
যুবকের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েন চিকিৎসক ইন্দ্রনীল সাহা। তিনি জানিয়েছেন, ‘এরপর তো হবু জামাই সহবাসে সক্ষম কী না তাও জানতে চাইবেন হবু শ্বশুর! জীবদ্দশায় আরও কত কী দেখতে হবে কে জানে!’
ফেসবুকে দেওয়া ডা. ইন্দ্রনীল সাহার এই পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয়। অনেকেই এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্তব্য করেছেন। একজন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘জামাই কি রেসের ঘোড়া? বিয়েতে নামার আগে দেখে নিচ্ছেন, রেসে কেমন দৌঁড়বে!’
ইন্দ্রনীল জানিয়েছেন, ‘এর পর তো পাত্রপক্ষ পাত্রীর ফ্যালোপিয়ান টিউব পরীক্ষার দাবি তুলবে। তখন?’ এদিকে চিকিৎসক তার পোস্টে আরও জানিয়েছেন, গত শনিবার (২৩ অক্টোবর) ওই পাত্রের বীর্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবেই ফেসবুকের ওই পোস্টে পাত্র, পাত্রী ও তাদের পরিচয় গোপন রেখেছেন চিকিৎসক।
অবশ্য বহু চিকিৎসকই ইন্দ্রনীলের পোস্টে কমেন্ট করেছেন। তারা ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাদের মত, এভাবে দরদাম করে সম্পর্ক তৈরি হয় না।
যে যাই বলুক, এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছেন কলকাতার ‘অল বেঙ্গল মেনস ফোরাম’-এর সভানেত্রী নন্দিনী ভট্টাচার্য। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘আগামী ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। তার আগেই কলকাতার এই অমানবিক ঘটনাটি বিশ্বের নজরে আনা হবে। মেয়েরা মা হতে সক্ষম কি না তাও যাতে বিয়ের আগে যাচাই করা হয়, সেই দাবিও তোলা হবে।’
তবে চিকিৎসক ইন্দ্রনীল সাহার মতে, ‘বিয়ের আগে থ্যালেসেমিয়া, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি আছে কি না অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত। কিন্তু শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর সংখ্যা জেনে বিয়ে করা বাড়াবাড়ি। পরীক্ষায় সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও প্রেগন্যান্সি নাও হতে পারে। মনে রাখতে হবে, বিয়ে সফল হওয়ার আসল চাবিকাঠি ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা। এগুলো জানার তো কোনো পরীক্ষা নেই।’
টিএম